Tuesday, September 26, 2017

নামহীন-শিরোনামহীন

নামহীন-শিরোনামহীন।
===============
আমার ওয়েবসাইটের এ পাতাটি শুধু আপনার,
এতে থাকছে আপনারই লেখা আধুনিক কবিতাগুলো।
আশ্চর্য হচ্ছেন ? ভাবছেন কীভাবে লিখবেন?
ভাবছেন ছন্দইতো আসেনা, লিখবেন কীভাবে?
দরকার নেই ছন্দের, গদ্য কবিতা লিখুন।
মনের সব ভাবনাগুলো বিরামহীন লিখে ফেলুন।
এবার দেখুন কোথায় কোথায় থামলে ভাল লাগে,
সেখানেই প্রয়োজনমত বিরাম চিহ্ন বসিয়ে দিন।
তারপর ছোট ছোট লাইনগুলো নিচে নিচে সাজান,
দেখুন নিশ্চয়ই কবিতার মতই লাগছে। তাইনা ?
ভাবছেন কী লিখবেন ? ভোরের আকাশ নিয়ে লিখুন,
শুনশান নিরবতা নিয়ে লিখুন। নির্মল বায়ু, সবুজ মাঠ,
নদীর ঢেউ নিয়ে লিখুন। বৃষ্টির রিম ঝিম শব্দ,
পাখীর কলতান নিয়ে লিখুন। রাতের স্তব্ধতা নিয়ে লিখুন।
পাহাড়, পর্বত আর সমুদ্র নিয়ে লিখুন।সত্য, ন্যায় আর
ভাল নিয়ে লিখুন।প্রকৃতি নিয়ে লিখুন, হৃদয় নিয়ে লিখুন।
জীবন নিয়ে লিখুন, জীবনের কালগুলো নিয়ে লিখুন।
ভাবছেন পারবেন কিনা? আসলেইতো পারবেন কীভাবে?
এখনও শুরুইতো করেননি।আচ্ছা শুরু না হয় করলাম,
কিন্ত……… যদি ভুল হয় ? হোকনা তাতে কী ?
জানেন?ভুল করেনা যে, আসলে কিছুই করেনা সে ।
আচ্ছা লিখলাম যদি ভাল না হয় ? কেউ উপহাস করলে?
করুকনা তাতে কী ? তাদেরকে তাই করতে দিন।
ওদিকে কান না দিয়ে আপনি শুধু লিখতে থাকুন,
দেখবেন আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাবেন, আর ওরা আপনার
ছিদ্র খুজতে খুজতে নিজের আরামের ঘুম হারাম করবে।
কিন্ত…… যদি সুন্দর না হয়? সমস্যা নেই। রুপ চর্চার
মতই চেষ্টা চালিয়ে যান।লিখুন আর এডিট করুন,
দেখবেন লিখে ফেলেছেন অনেক কিছূ।
ভাবছেন দু’চার দিন ভেবে চিন্তে একটা শিরোনাম
ঠিক করে তারপর লেখা শুরু করবেন? উঁ…হু
ওভাবে প্রস্ততি নিয়ে হবেনা। কবে নয় মণ ঘি
যোগাড় করবেন? আর কবে রাধা নাচাবেন?
এক্ষুনি শুরু করুন, ভাবুন-লিখুন-লিখতে থাকুন।
আগে লিখুন তারপর শিরোনাম নিয়ে চিন্তা করুন।
তবে যা লিখবেন তা মানুষের কল্যানে লিখুন,
মানুষকে আনন্দ দিতে লিখুন । আর এ শিরোনামহীন
লেখাটি আপনার ভাল লাগুক আর না লাগুক আপাততঃ
আপনার পছন্দের একটি নাম কমেন্ট বক্সে লিখে দিয়ে
আমার ভবিষ্যত চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকুন ।।


=== এ এস এম কামাল উদ্দিন

Sunday, September 24, 2017

বহুরুপী মানবতা

বহুরুপী মানবতা
--এ এস এম কামাল উদ্দিন ।
======================
মানবতার এখন রং অনেক, রুপও রয়েছে অনেক,
সারা দুনিয়ায় মানবতার রুপ এক,নাফের ওপারে আরেক।
মানবতা এখন ক্ষুদার্ত হয়ে জলে ডুবে মরছে,
মানবতা এখন খাবার প্যাকেটে আকাশেতে উড়ছে ।
মানবতা রক্ষায় দুনিয়া ব্যাপী আলোচনা চলছে যত,
ওখানে মানবতা টুকরা হচ্ছে কোরবানীর পশুরই মত।
মানবতা রক্ষায় সারা দুনিয়া করছে ফিকির ফন্দি,
নাফের ওপারে বিবস্ত্র মানবতা গাছে রয়েছে বন্ধী ।
মানবতা রক্ষায় সোচ্চার কেউ, কেউবা করছে ঢং,
নাফের ওপারে মানবতার রক্ত যেন হলি খেলার রং।
মানবতা রক্ষার আলোচনা যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে,
নাফের ওপারে তখন ছুরি চলে মানবতারই বক্ষে ।
মানবের চোখে মানবতার অশ্রু, মানবীর চোখেও জল,
মানবতার কোন রুপটি আসল, কোনটিইবা ছল।
কেউ করে মানবতার ফান,কেউবা চিবায় মানবতার পান,
বহুরুপী এ মানবতার এখন প্রায় ওষ্টাগত প্রাণ ।

আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন
আরও কবিতা পড়তে ক্লিক করুন

Friday, September 22, 2017

সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির ইহকাল-পরকাল

সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি’র ইহকাল-পরকাল

বাংলাদেশে বর্তমানে যে সকল বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মরত আছেন তাঁদের কেউই সম্ভবত বর্তমানের সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়া লেখা করেননি ।শুধু ক্যাডার সার্ভিস কেন সম্ভবত গত বছর এমনকি চলতি বছরের এখন পর্যন্ত যাঁরা শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি, বা সমপর্যায়ের যে সকল কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁরাও প্রায় সকলেই বর্তমানের কথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়া লেখা করে আসেননি ।বর্তমানে আমাদের দেশে যে সকল বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ আছেন তাঁরা কেউই বর্তমানের কথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে পড়া লেখা করে আসেননি ।

যতদূর জানি এখন পর্যন্ত ৩৫ তম বিসিএস এর নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে । সে হিসেবে ৩৫ তম বিসিএস ক্যাডার বা নন ক্যাডার অথবা সমপর্যায়ের অন্য কোন বেসরকারি চাকুরিতে প্রথম চান্সেই যিঁনি কোয়ালিফাই করেছেন সাধারন হিসাব অনুযায়ী তিঁনি ২০১০ এর আগেই এস এস সি বা সমমান পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন ।আর ২০১০ সালে মাধ্যমিকে প্রথম বাংলা ধর্মশিক্ষায়সৃজনশীল পদ্ধতিতে  পরীক্ষা  নেয়া  শুরু হয় পরের বছর গুলোতে ধীরে ধীরে  প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক    উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পর্যায়ক্রমে সকল বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়সে হিসেবে বলা যায় ৩৫ তম বিসিএস এ যাঁরা অংশগ্রহন করেছেন তাঁরা প্রায় সকলেই সনাতন পদ্ধতিতে লেখা পড়া করেছেন ।

সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি আমদানি হয় মূলত ২০০৭ সালে ।কে আমদানি করেছেন? কেন আমদানি করেছেন? সৎ উদ্দেশ্যে করেছেন, নাকি অসৎ উদ্দেশ্যে করেছেন ? সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির কারনে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বেড়েছে, নাকি কমেছে ? এর ফলে শিক্ষার্থীর উন্নতি হয়েছে, নাকি পরীক্ষার্থীর উন্নতি হয়েছে ?  শিক্ষিতের হার বেড়েছে, নাকি পাশের হার বেড়েছে ? এ পদ্ধতির ফলে জ্ঞানী গুণী বেড়েছে, নাকি অজ্ঞের সংখ্যা বেড়েছে ? এরকম প্রশ্নের যেমন শেষ নেই, তেমনি উত্তরেরও অভাব নেই । সৃজনশীল হওয়ার বা বানানোর জন্য গাদা গাদা গাইড বই ক্রয় আর কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের দৌড়াদৌড়ি আর বর্তমানে শিক্ষা নামক এ পণ্যটি ক্রয়-বিক্রয়ের দৃশ্য এবং এর বিপরীতে প্রাপ্ত উপযোগিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই অনেক প্রশ্নের উত্তর নিহীত রয়েছে ।তাই লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করতে ওসব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ঘাঁটঘাঁটি আপাতত মূলতবী রাখলাম । 
   
মূলত শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যায় নিরুৎসাহিত করে সৃজনশীলতা বাড়ানো, গাইড বা নোট বই নির্ভরতা কমানো ও কোচিং দৌরাত্ন্য বন্ধের উদ্দেশ্যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয় । কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও একথা গরিষ্টজন স্বীকৃত যে, এর কোনটিই কামানো বা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বরং বেড়েছে বহুগুণ ।বর্তমানের কথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রে হাসি তামাশার আলোচ্য বিষয়ে পরিনত হয়েছে ।

যে সকল শিক্ষক অনেকদিন ধরে এক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করে আসছেন, তারা অনেকেই নতুন পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত হচ্ছেননা অথবা হতে পারছেননা ।আর হাজার লক্ষ্য উদ্দীপক বা অনুচ্ছেদ যেখানে গাইড বইতে রেডিমেড পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে সৃজনশীল হওয়ার জন্য মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করার মত বোকামী কাজ না করার সাধারন জ্ঞানতো অন্তত একজন শিক্ষকের থাকার কথা ।তাই কষ্ট না করে অনেকে সৃজনশীল প্রশ্ন প্রনয়নের জন্য সরাসরি গাইড বই অবলম্বন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন ।যে কারনে শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের সৃজনশীলতা বাড়েনি বরং শিক্ষা ব্যবসায়ীদের সৃজনশীলতা বেড়েছে ।

সৃজনশীলতার মানে হলো চিন্তাকে কোন নির্দিষ্ট ফ্রেমে বা কাঠামোর মধ্যে বন্ধী করে না রাখা । কিন্ত আমাদের বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতির নাম সৃজনশীল হলেও পরীক্ষা দিতে হয় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন পদ্ধতিতে । যে উদ্দীপকের বিপরীতে প্রশ্ন করা হয় সে প্রশ্নগুলি উদ্দীপক সংশ্লিষ্ট হয় কিনা সেটা নিয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিস্তর বিতর্ক করা সম্ভব ।এরকম অবস্থায় পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত সময়ের স্বল্পতার মধ্যে পরীক্ষার্থী প্রশ্নের বিপরীতে উত্তরের কীওয়ার্ড(Keyword)আবিস্কার করতে প্রশ্ন-উদ্দীপক, উদ্দীপক-প্রশ্ন এরকম করতে করতে তার দৃষ্টি ও চিন্তা একটি কাঠামোর মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে পড়ে । ফলে সাধারন ও কম মেধার শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েই আবোল তাবোল লিখে তার সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় ।আর উদ্দীপক-প্রশ্নের সমন্বয় থাকলে শুধুমাত্র মেধাবী শিক্ষার্থীই কিছুটা সঠিক উত্তর লিখতে পারে ।

বর্তমান কথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান কয়েকটি অন্তরায় হলো-শিক্ষাবর্ষের সময়ের তুলনায় সিলেবাসের ব্যাপকতা, সাবজেক্টের আধিক্য, ক্ষেত্র বিশেষে প্রশ্নকর্তার অতি পান্ডিত্যপনা, সৃজনশীল বইয়ের অভাব, গাইড বই ও কেচিংয়ের অবাধ বাণিজ্য, সৃজনশীল পাঠদান পদ্ধতির অভাব, অবাধ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা ইত্যাদি ।সৃজনশীল শিক্ষার মত এমন একটি পদ্ধতি চালুর পূর্বে সার্বিকভাবে আমাদের যে প্রস্ততি থাকার প্রয়োজন ছিল তা মোটেই ছিলনা । যে কারনে এ পদ্ধতিটি অনেকটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি অভিভাবকদেরও বধহজমে পরিনত হয়েছে ।

কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে এ পদ্ধতিতে কী শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখছেনা ? উত্তর হলো অবশ্যই শিখছে, তবে অতি নগন্য সংখ্যক ।বলতে পারেন এরা কারা ? সহজ সরল ভাষায় এর উত্তর হলো অল্প সংখ্যক মেধাবী ও সচেতন শিক্ষার্থী যাদের অভিভাবকগন মোটামুটি শিক্ষিত ও সচেতন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারাই কিছু শিখছে এবং মোটামুটি সত্যিকারের ভাল ফলাফল করছে ।আর ভাল ফল অর্জনকারী হৃত দরিদ্র মেধাবী যাদের কথা আমরা পত্র পত্রিকায় দেখি এরা অতি নগন্য সংখ্যক তাও অধিকাংশই কারও দয়া বা দাক্ষিন্যের কারনেই পারছে ।আর যারা করতে পারছে তাদের কাছে এ পদ্ধতি আর ও পদ্ধতি কোন ব্যাপার নয়, তারা যেকোন পদ্ধতিতেই পারার মত মেধাবী । আর বাস্তব চিত্র হলো সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র, নিম্ন বিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারন ছেলে মেয়রা ।

সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার যেমন শেষ নেই, তেমনি সমালোচনারও শেষ নেই ।লেখার শুরুতেই যাঁদের কথা বলছিলাম তাঁরাতো সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে লেখা পড়া করেননি, তাহলে তাঁদের মধ্যে কী সৃজনশীলতার অভাব আছে বা ছিল ? প্রকৃত সত্য হলো- সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষায় শিক্ষিত এসব মানুষের অধিকাংশেরই চিন্তার জগত এখনও আকাশের মতই সীমাহীন, সৃষ্টিশীলতার ভিত্তি এখনও পর্বতের মতই সুদৃঢ়, ভাষাজ্ঞান এখনও সমুদ্রের মতই গভীর, কথোপকতন এখনও সুধারসে পূর্ন, ভদ্রতা এখনও প্রকৃতির মতই সুন্দর আর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সিংহের মতই সাহসী ।

ঢাক ঢোল পিটিয়ে চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ আওয়াজ তুলে দশ বছর আগে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল ।আজ দশ বছর পর এ ব্যবস্থার ফলাফল মূল্যায়ন করলে এসত্যই বের হয়ে আসবে যে, কথিত এ সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষায় শিক্ষিত এসব মানুষের অধিকাংশেরই চিন্তার জগত উদ্দীপক-প্রশ্ন-উদ্দীপক এর মধ্যে সীমিত হয়েছে, সৃষ্টিশীলতার ভিত্তি কচু পাতার উপর পানির মতই নড়বড়ে হয়েছে যা প্রায় পঁচানব্বই ভাগ পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখলে প্রমাণ মিলে যাবে । ভাষাজ্ঞানের গভীরতা আর কথোপকতনের রসবোধ কোথায় পৌঁছেছে তার বড় প্রমাণতো রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটসে আর কমেন্ট বক্সের লেখায় । বাদবাকী বিষয় নিয়ে আলোচনা আপাতত আজকের মত স্থগিত থাকুক ।

দশ/এগার বছর আগে যে শিক্ষার্থী নবম শ্রেনি বা সমমানের ক্লাসে ছিল এখন তার শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার বা শেষ প্রান্তে থাকার কথা । তাই সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির অধীনে শিক্ষাগ্রহনকারীদের কর্মজীবনে আসার সময় হয়েছে । এখন দেখার সময়ও আসছে যে, আসলে কারা এবং কত পার্সেন্ট প্রকৃত সৃজনশীল শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছে ।সৃজনশীল শিক্ষা জীবন নামক ইহকালের অর্জন দ্বারা কর্মজীবন নামক পরকালের কী ফল প্রাপ্তি হয় তা দেখার সময় আর বেশি দূরে নয় ।

একটি গল্প দিয়ে শেষ করতে চাই ।এক ভদ্রলোকের জন্য তাঁর এক আত্নীয় বিদেশ থেকে গিফট হিসেবে একটা পাঞ্জাবীর কাপড় পাঠিয়েছেন ।ভদ্রলোক কাপড়টি টেইলারকে দিয়ে বললেন মেপে দেখুনতো আমার গায়ের পাঞ্জাবী হবে কিনা? টেইলার মেপে বললেন হ্যাঁ হবে ।ভদ্রলোক অর্ডার দিয়ে রওয়ানা হলেন কিন্ত কিছুদূর গিয়ে থেমে গেলেন এবং সন্দেহ করলেন যে তার ওখানে নিশ্চয়ই এক পাঞ্জাবীর চেয়ে বেশি কাপড় আছে, তা না হলে টেইলার এত তাড়াতাড়ি কেন হ্যাঁ বললেন ।তিনি দোকানে ফিরে এসে টেইলারকে জিজ্ঞেস করলেন- ভাই আমার মেঝো ছেলেটার বয়স সাত বছর, তার জন্যও কী একটা পাঞ্জাবী হবে ? টেইলার উত্তর দিলেন হ্যাঁ হবে ।ভদ্রলোক মেঝো ছেলের পাঞ্জাবীর অর্ডার দিয়ে আবারও সন্দেহ করলেন যে তার ওখানে নিশ্চয়ই দুই পাঞ্জাবীর চেয়েও বেশি কাপড় আছে, তা না হলে টেইলার এত সহজে কেন হ্যাঁ বলছেন । আবারও তিনি টেইলারকে জিজ্ঞেস করলেন - ভাই আমার ছোট ছেলেটার বয়স মাত্র তিন বছর, তার জন্যও কী একটা পাঞ্জাবী হবে ? টেইলার উত্তর দিলেন হ্যাঁ হবে । ভদ্রলোকের সন্দেহের মাত্রা আরও বেড়ে গেলে তিনি টেইলারকে বললেন- আমাদের তিনজনের জন্য তিনটা টুপিওতো নিশ্চয়ই হবে তাইনা ? টেইলার একই কায়দায় উত্তর দিলেন হ্যাঁ হবে ।যেহেতু ভদ্রলোকের আর কোন ছেলে নেই তাই মনের মধ্যে কষ্ট এবং আরও গভীর সন্দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন ।ডেলিভারীর দিন টেইলার ভদ্রলোককে তিনটি পাঞ্জাবী ও তিনটি টুপি একটি প্যাকেটে গুনে বুঝিয়ে দিলেন । ভদ্রলোকতো মহা আনন্দে গুন গুনিয়ে গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরলেন ।নিজের বুদ্ধিমত্তার গুনে লাভবান হওয়ার কথা স্ত্রীর নিকট ব্যক্ত করতে করতে প্যাকেট খুললেন ।সংখ্যায় তিনটি পাঞ্জাবী ও তিনটি টুপি পেলেন ঠিকই কিন্ত এগুলির সাইজ এতটাই ছোট ছিল যেটা কারও কোন ব্যবহারে আসেনি ।পণ্যগুলো হয়তো কারও কাজে আসেনি কিন্ত টেইলার সাহেবতো কাউকে খালি হাতে ফেরাননি ।             
সনাতন পদ্ধতিতে যাঁরা লেখাপড়া শিখে পরীক্ষা দিয়েছেন, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কৃতকার্যরা বলতেন অমুক বা তমুক ডিভিশন পেয়েছি । কিন্তু অকৃতকার্যরা কখনও বলতেননা আমি ফেল ডিভিশন পেয়েছি ।কিন্ত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি এটার ব্যতিক্রম । এখানে কৃতকার্যরা যেমন বলতে পারেন আমি অমুক বা তমুক গ্রেড পেয়েছি । তেমনি অকৃতকার্যরা বলতে পারেন আমি ‘এফ’ গ্রেড পেয়েছি । অর্থাৎ সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে কাউকে খালি হাতে ফেরানো হয়না ।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জনাব আমিরুল  আলম খানের লেখা একটি নিবন্ধ থেকে দু’টি লাইন উদ্বৃত করে শেষ করতে চাই । তিঁনি লিখেছেন- ‘‘ সৃজনশীলের  নামে  দেশ  থেকে  লেখাপড়া  নির্বাসনে  গেছেস্কুল-কলেজ  নিষ্প্রয়োজনীয়  হয়ে  পড়েছেকোচিং  সেন্টারই  এখন  শিক্ষার মঞ্জিল মকসুদ এভাবে  এক  অশিক্ষিতঅদক্ষঅসৎবিবেকহীননির্লজ্জলোভী   আত্মপরায়ণ  ভবিষ্যৎ  প্রজন্ম  তৈরি  হচ্ছে  ‘’  
জনাব আমিরুল  আলম খানের বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, দশ বছর আগে ঢাক ঢোল পিটিয়ে চারদিকে হৈ হৈ রৈ রৈ আওয়াজ তুলে সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা নামক যে পর্বত জাতির ঘাঁড়ে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, দশ বছর পর সে পর্বত রুগ্ন মুসিক প্রসব করেছে । জাতিকে মেধায় বিকলাঙ্গ করার কোন সূদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য না থাকলে বর্তমানের কথিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আমাদের এখনও টনক নড়ছেনা কেন ?

উদীয়মান কবি জাফর আহমেদ এর কবিতা- উজান মেয়ে

উজান মেয়ে
-----জাফর আহমদ----
""""""""""""""""""""""""'""""''''""
ছিপছিপে গা খাঁ খাঁ শরীর বানতালাশ্যা নদী
পা ছড়ানো উজান মেয়ের গা পুড়ে যায় যদি
গা পুড়ে যায় উজান মেয়ের এত্ত কঠিন জ্বর
শাপলা লতার প্যাঁচ দিয়ে কে আটকালো তার ঘর ?
আটচালা ঘর খুলবেরে কে ঘন্টা বাজে দুরে
ঘন্টা বাজে বুক চাতালে ঢেউ ছলোছল সুরে
ঢেউ এর পরে ঢেউ চলে যায় ভাঙ্গে নদীর কুল
বুকের ভেতর মন ছিলনা এইটুকুনই ভুল
ভুলের মাসুল আসল সহ কে শোধিবে ঋণ
উজান মেয়ের যায়না ভালো দিনগুলি রঙিন
ভাসায় নদী হারায় নদী দিক ভুলে যায় চাঁদ
জল পতনের শব্দ তুলে হয় নদী উন্মাদ
মত্ত নদী নেয় ভাসিয়ে উজান মেয়ের সুখ

হায়রে নদী ক্যামনে হলি এমন সর্বভুক ??????

কবি জাফর আহমেদ সম্পর্কে আরও জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

আরও কবিতা পড়তে ক্লিক করুন
আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন

Thursday, September 21, 2017

উদীয়মান কবি জাফর আহমেদ এর কবিতা- ওগো পরোয়ার

গো পরোয়ার
-------  জাফর আহমদ-----------
"""""""""""""""""""""""""""""""""""
গো পরোয়ার সইতে পারিনা আর
কান্নার রোল শুধু নিরবধি ,
কেউ নেই রাহাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার
এভাবেই শেষ হয়ে যাই যদি ?
পুড়েছে বসতভাটি ছেড়েছি নিজের মাটি
শুষে নিবে ওরা আর কত রক্ত ?
কত আর লাশ হলে দিন রাত মাস গেলে
উড়ে যাবে জালিমের তখত ?
মেয়েটা লাজুক ছিলো জানিনাতো কি যে হলো
ভেসে এলো নির্মম চিৎকার ,
তারপরে উল্লাস পড়েছিলো কাটা লাশ
থেমে গেছে জালিমের শিৎকার
ছেলে বাবা মা' গেলো বুক চোষা ধন গেলো
বেঁচে আছি মুনাজাত তুলতে,
তবু হোক নিস্তার জুলুমের বিস্তার
তুমি যদি থাকো পারি সব ভুলতে
নেই আর কোলাহল রক্তের নোনাজল
সাগরের স্রোতে যায় মেশে ,
রক্তের কথা লিখে  আকাশের রঙও ফিকে
মুক্তির ঠিকানাটা পাবো কিনা শেষে ?
কত হলে তাজা দিল আসবে সে আবাবিল
শেষ হলে কত দিবা রাত্র ?
হস্তির বাহিনী শুধু কি সে কাহিনী

হবোনাগো রহমের পাত্র ????????????

 কবি জাফর আহমেদ সম্পর্কে আরও জানতে ছবিতে ক্লিক করুন।
কবি জাফর আহমেদ সম্পর্কে
আরও জানতে ছবিতে ক্লিক করুন

আরও কবিতা পড়তে ক্লিক করুন
আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন

আমার শিশু-আমাদের সম্পদ


একটি শিশু পৃথিবীতে আসে অনেক  অনন্ত সুপ্ত সম্ভাবনা নিয়ে ।ব্যতিক্রম বাদ দিলে ভুমিষ্ট হওয়ার পর চোখ মেলে যখন পৃথিবীকে দেখা শুরু করে তখন থেকেই তার প্রতিভা বিকাশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ।ধীরে ধীরে তার মধ্যে অনুভূতি প্রবল হতে থাকে ।অন্যদের কাজকর্ম বা চালচলন দেখে অনুকরন করা শুরু করে।একদিন শিশু স্বাভাবিক শোয়া থেকে উপুড় হয় যা তার বসতে পারার আগ্রহ বা অনুভুতির প্রথম প্রচেষ্টা । একদিন শিশু নিজ থেকে বসতে পারে যা তার দাঁড়াতে পারার আগ্রহের পূর্ব প্রচেষ্টা। একদিন শিশু নিজ থেকে দাঁড়াতে পারে যা তার হাঁটতে পারার আগ্রহেরই প্রচেষ্টা ।একদিন শিশু নিজ থেকে হাঁটতে পারে যা তার দৌড়াতে পারার আগ্রহের আরেক প্রচেষ্টা ।এভাবে একটি শিশু তার নিজের প্রচেষ্টা আর মা বাবা ও পরিবারের অপরাপর সদস্যদের অনুপ্রেরনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সে তার সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। কিন্তু সে তার অপার সম্ভাবনার সঠিক ব্যবহার করতে পারবে কিনা তা অনেকাংশে নির্ভর করে তার পরিবারের পরিবেশ ও পরিবারের সদস্যগণরে মানষিকতার ওপর। পরিবারের ইতিবাচক পরিবেশ যদি সে পায় তাহলে সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারে। আর যদি নেতিবাচক পরিবেশ পায় তাহলে তার মেধার বিকাশ সেভাবেতো হয়ইনা না বরং মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয় ।

পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা ।তবে শুধু শিশুকালেই নয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার সঠিক বিকাশের জন্যে পরিবার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে।অনেক মা বাবা ও পরিবারের অপরাপর সদস্যবৃন্দ আছেন যাঁরা শিশুকে স্বাধীনভাবে কোন কাজ করতে দেননা।বিশেষকরে পরিবারের প্রথম সন্তান হলেতো কথাই নেই।কারন প্রথম সন্তান থাকে মা বাবার স্বপ্নের ও অতি আদরের ।শিশু যখন নিজ থেকে কোন কিছু করতে যায় তখন অনেকেই শিশুকে পড়ে যাওয়া বা ব্যথা পাওয়ার ভয়ে তাকে তা করতে না দিয়ে নিজেরাই করে দেন ।এধরনের ক্ষেত্রে প্রায় শিশুরাই আত্ননির্ভরশীল ও আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠেনা ।এক্ষেত্রে সকলেরই উচিত শিশুকে নিজ থেকে কাজ করতে দেয়া আর পাশে থেকে তাকে কিছুটা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া এবং খেয়াল রাখা যাতে কোন বিপদ না ঘটে।

পরিবার থেকেই শিশুরা জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা পেয়ে থাকে, যেমন আচার-আচরণ, রচি-পছন্দ, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, সৌজন্য, সামাজিকতা, আত্নবিশ্বাসী, আত্ননির্ভরশীলতা ইত্যাদি । এসব বিষয় সবটুকুই শিশু স্কুল থেকে শিখবে এমনটি আশা করা কোনো বাবা-মা’রই উচিৎ নয় । শিশু স্কুলে থাকে অতি অল্প সময় যখন অধিকাংশ সময়ই কিছু নির্দিষ্ট পুঁথিগত সিলেবাসের মধ্যে আবদ্ধ থাকে ।পুঁথিগত বিদ্যার বাইরের বিশাল জগতই শিশুর মেধা বিকাশ ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র ।তাই হয়তো John Holt বলেছেন “School is a place where children learn to be stupid”. তাই শিশুকে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলতে দেয়া, বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া, টিভি দেখতে দেয়া হলে তার মেধার যেমন পরিপূর্ন বিকাশ ঘটবে তেমনি পুঁথিগত বিদ্যার বাইরের বিশাল জগত থেকে শিশু পরিপূর্ন জ্ঞানও অর্জন করবে ।অনেক সময় অনেক মা বাবা শিশুকে মোটেই খেলতে দেননা অথবা খেলা থেকে তুলে এনে শাসন করেন এবং পড়তে বসতে বাধ্য করেন ।এসময় শিশুর কাছে অনুভুত হয় যে খেলাটা তার নিজের জন্য আর পড়ালেখাটা মা বাবার জন্য । একারনে শিশু মনে করে তার খেলার অধিকার কেড়ে নিয়ে মা বাবা তাদের নিজের স্বার্থে তাকে দিয়ে লেখাপড়ার কাজটি করিযে নিচ্ছে ।এধরনের পরিস্থিতিতে শিশুর মধ্যে তার নিজের কাজ আর খেলার প্রতিই বেশি আকর্ষন থাকে ।

সাধারণভাবে আমাদের মা-বাবাদের ধারণা হলো সন্তান পড়াশুনায় ভালো ফলাফল (এ+, গোল্ডেন এ+) করতে পারলেই সে মেধাবী হবে। তাই সন্তান যাতে পড়াশুনায় ভালো ফলাফল করে সেজন্য তাকে চাপ দেয়া হয়। এতে করে সন্তান হয় পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে নইলে ভালো ফলাফল করার জন্য মানসিক চাপ অনুভব করে। যার কোনটাই আসলে তার মেধার সঠিক বিকাশ ঘটাতে পারে না। মা-বাবা যদি পড়াশুনায় ভালো ফলাফল করার জন্যে চাপ না দিয়ে সন্তানকে উৎসাহিত করেন, সন্তানের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেন তাহলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই পড়াশুনায় ভালো ফলাফল করতে পারবে এবং মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তানের কিসে আগ্রহ আছে তা অনেক মা-বাবাই চিন্তা করেন না বরং শুধুমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্নে তারা সন্তানের পড়াশুনা সহ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। যা আসলে সন্তানের মেধার বিকাশকে বাধাগ্রস্থ করে । ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও পৃথিবীতে হরেক রকমের পেশা আছে যার মাধ্যমে আজকের শিশু বড় হয়ে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারে।শিশুকে তার জীবনের গতি প্রকৃতি নিধারন করতে মা বাবা ও শিক্ষকদের উচিত হরেক রকম পেশা সম্পর্কে তাকে ধারনা দেয়া যা থেকে সে নিজেই নিজের ভবিষ্যত পেশা পছন্দ করে নিতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা “আম গাছকে চৌমাথায় দাঁড় করিয়ে যতই ঠেংড়াইনা কেন সেটা প্রয়োজনের কাঁঠাল ফলাতে পারবেনা। বরং ঠেংড়ানি খেয়ে উল্টো তার আম ফলাবার শক্তিটাও লোপ পেয়ে যাবে ’’। তাই ‘ উচ্চ শিক্ষিত মাছিমারা কেরাণী না হয়ে স্বল্প শিক্ষিত আবিস্কর্তা হোক ’- এমন ইচ্ছাই মা বাবাদের থাকা উচিত।

উৎসাহ বা প্রশংসা শিশুর সাফল্য র্জনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সাফল্যে যেমন অভিনন্দন জানানো উচিত, তেমনি শিশু যখন ব্যর্থ হয় তখনও তাকে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমান উৎসাহিত করা উচিৎ। ব্যর্থতার উপর দাঁড়িয়ে সফল হওয়ার স্বপ্ন শিশুদের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে। শিশুরা অনেক সময় সাধারন বিষয়ে ভুল করেও পরীক্ষায় খারাপ করতে পারে। এক্ষেত্রে ফলাফলকে বড় করে না দেখে বরং কি শিখতে পেরেছে তাই বড় করে দেখা উচিত। শচীন টেন্ডুলকার তার ওয়ান ডে ক্যারিয়ারের প্রথম দু’টি ম্যাচে শূণ্য রানে আউট হয়েছেন ।মেসি জীবনে অনেকগুলো সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন । কিন্তু আজ তাঁরা পৃথিবী কাঁপানো সাফল্য পেয়েছেন । অল্প কিছু ব্যর্থতা না থাকলে জীবনে অনেক সাফল্য আসবে কিভাবে ? মা বাবাকে শাসক না হয়ে সন্তানের বন্ধু হতে হবে আর তাকে এ বিষয়টি বুঝাতে হবে যে চেষ্টা চালিয়ে গেলে একদিন কাংখিত সাফল্য আসবেই।আর তাকে এ বিষয়টিও বুঝাতে হবে যে, সাফল্যের চুড়ান্ত ফলাফল ভোগ করবে শিশু নিজেই।
“আমার শিশু আমাদের সম্পদ’’-এ কথাটা আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে ।তাই শিশুকে তার নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে জন্ম থেকে কমপক্ষে বিশ বছর বয়স পর্যন্ত তার সবকিছুতে পিতা-মাতাকে সজাগ ও সুদৃষ্টি রাখতে হবে।

আরও নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন

   






Wednesday, September 20, 2017

অনিয়মের স্বর্গে নিয়মের নরকবাস

‘‘বিবেক বাবু মারা গেছে সত্য বাবুর গায়ে জ্বর, নীতি বাবু দেশ ছেড়েছে বিবিসি’র খবর ।
উচিত বাবুর কানে তালা জুলুম বাবুর বেজায় জোর, শান্তি বাবু অশান্তিতে হবেনা আর হয়তো ভোর ।’’
উপরের কথাগুলো কে লিখেছেন জানিনা । জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কোন আইডিতে আমি পড়েছি বলে মনে পড়ছে । চাকুরির সুবাদে মাঝে মধ্যে শিক্ষকতার বাইরেও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়।সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উপরে উল্লেখিত কবিতার কথাগুলো আমার বার বার মনে পড়েছে ।এটা ছিল এক ভিন্ন কিসিমের নতুন অভিজ্ঞতা । সত্য-মিথ্যা, নিয়ম-অনিয়ম, বিবেকবান-বিবেকহীন, শান্তি-অশান্তি, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, ভাল-মন্দ, নিরপেক্ষতা-পক্ষপাতিত্ব, গণতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র ইত্যাদি শব্দের সংজ্ঞা যেভাবে পড়েছি আর প্রাকটিস করেছি জীবনের এ পর্য়ায়ে এসে শব্দগুলিকে বড় অচেনা, বড় অপিরিচিত, বড় ওলট পালট, বড় বেখাপ্পা এমনকি বড়ই বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে।
প্রতিটি বিষয় বা বস্তুর সংজ্ঞা তৈরি হয় মূলত এর এক বা একাধিক আলাদা বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রের উপর ভিত্তি করে। মানুষ এবং জানোয়ার বলতে আমরা যা বুঝি বা যে প্রাণীকে বুঝাই তা এ দুই প্রজাতির বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রের কারনে ।এদের বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করেই আমরা মানূষরাই মানুষ এবং জানোয়ারের পার্থক্য করতে পারি ।পবিত্র কোরআন শরীফে মানুষকেই বলা হয়েছে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা ‘সৃষ্টির সেরা জীব’ ।সত্য-মিথ্যা, নিয়ম-অনিয়ম, বিবেকবান-বিবেকহীন, শান্তি-অশান্তি, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, ভাল-মন্দ, নিরপেক্ষতা-পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি শব্দগুলির সংজ্ঞা মানুষকেই শিখতে হয়, জানতে হয় এগুলির মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্য ।আর মানুষ এগুলি সম্পর্কে জানতে বা শিখতে পারে পারিপাশ্বিক অবস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে ।

মানুষের মান সম্মান বোধ আর হুসজ্ঞান আছে বলেই ভাল মন্দের পার্থক্য জানতে হয়। জানোয়ারের এসব জানার প্রয়োজন হয়না তাই এদের জন্য কোন মসজিদ, মন্দির, মক্তব, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এসবের প্রয়োজন নেই ।এ কারনে জানোয়ারদের জীবন ‘খাওদাও আর ফুর্তি কর’ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।ভবিষ্যত বংশধরদের কী হবে এ চিন্তা জানোয়ারদের করার প্রয়োজন হয়না ।কিন্ত মানুষকে তা করতে হয় কারন একজন মানুষের মৃত্যুর পর তার জীবদ্দশায় কৃতকর্মগুলোর পুরস্কার বা তিরস্কার ভবিষ্যত বংশধরদের বহন করতে হয় ।

আজ সত্য-মিথ্যা, নিয়ম-অনিয়ম, বিবেকবান-বিবেকহীন, শান্তি-অশান্তি, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত, ভাল-মন্দ, নিরপেক্ষতা-পক্ষপাতিত্ব, গণতন্ত্র-স্বৈরতন্ত্র এ শব্দগুলোকে আমাদের চিন্তার ব্লেন্ডার মেশিনে এমনভাবে গুলিয়ে ফেলেছি যে এ শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্নয় করাটা রীতিমত এক কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । এ জোড়া শব্দগুলো যেন নিজেদেরে মধ্যে এদের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র বদল করে নিয়েছে । এগুলি যেন পরস্পরের সাথে জায়গা বদল করে নিয়েছে । তাই এ শব্দগুলোকে আজ বড় অচেনা, বড় অপিরিচিত, বড় ওলট পালট, বড় বেখাপ্পা লাগছে ।আগের শেখা আর এখনকার দেখার মধ্যে এমন বিস্তর ফারাক যে মনের মধ্যে এমন প্রশ্নের উদয় হওয়া স্বাভাবিক যে কোনটি সঠিক? যা শিখেছি তা? নাকি যা বাস্তবে দেখছি তা?

আমার পরিচিত স্বল্প শিক্ষিত একজনের ধারনাটা ছিল এরকম যে, স্বার্থপর হওয়া ভাল কিন্ত নিঃস্বার্থ হওয়া ভাল নয় । কারন তার ধারনা স্বার্থপর মানে যিনি পরের স্বার্থে নিজ স্বার্থ ত্যাগ করেন আর নিঃস্বার্থ মানে পরের স্বার্থকে গুরুত্ব না দিয়ে যিনি নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেন । জানার অজ্ঞতা থেকে তিঁনি বিষয়গুলোকে এভাবে লালন করলেও পরবর্তীতে তাঁর ভুল ভাঙ্গে এবং জানার অজ্ঞতার জন্য নিজে যেমন লজ্জিত বোধ করেন একই সঙ্গে নিজের অজ্ঞতাকে ধিক্কারও দেন । কিন্ত এখন আমরা যেন স্বজ্ঞানেই আমাদের শেখা সবকিছুকে ইচ্ছাকৃত বিকৃত করে উপস্থাপন করছি ।

এডলফ হিটলারের প্রধান সহযোগী জোসেফ গোয়েবল্‌স এর তত্ব অনুসরন করে আমরা একটা চরম মিথ্যাকে এমন জোরালো কন্ঠে বার বার উপস্থাপন করছি যা এক সময় সত্যের বাপ দাদায় পরিনত হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে বিষয়গুলো এভাবে শুনতে শুনতে আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাইন্ড সেটআপ যদি এমন হয় যে, তারা দিনকে রাত, তিলকে তাল, অন্যায়কে ন্যায়, মিথ্যাকে সত্য, অনিয়মকে নিয়ম, মন্দকে ভাল, অনুচিতকে উচিত, স্বৈরতন্ত্রকে গণতন্ত্র আর পক্ষপাতিত্বকে নিরপেক্ষ বলেই গ্রহন করছে তাহলে পৃথিবীর সভ্য জাতি বলে আমরা যাদের জানি তারাওতো আমাদেরকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে ।

শুরুতেই বলেছিলাম সাম্প্রতিক কালে একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে দায়িত্ব পালনের কথা ।এ এক নতুন কিসিমের ভিন্ন স্বাধের তিক্ত অভিজ্ঞতা ।দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হরেক রকম মানুষের মধ্যে প্রধানত তিন শ্রেণির মানুষকে আমি নতুনভাবে আবিস্কার করেছি ।এক শ্রেণির মানুষ দোর্দন্ড প্রতাপে মিথ্যাকে সত্য আর অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে পেশি শক্তিতে এগুলি প্রতিষ্ঠিা করে চলছে যা মনবৈকল্যের অধিকারি সমজাতীয়দের দ্বারা সহজে স্বীকৃতিও পাচ্ছে ।শিক্ষিত ও অশিক্ষিত এক শ্রেণির মানুষ এগুলি দেখেও না দেখার ভান করে এগুলি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ।আর এক শ্রেণির অতি ভাল, অতি সরল ও অতি দুর্বল মানুষ আছে যারা নিরবে অশ্রু বিষর্জন ছাড়া প্রতিবাদের আর কোন ভাষা খুজে পাচ্ছেনা ।

সত্য বাবুরা যদি আর কখনও সুস্থ্য না হয়, নীতি বাবুরা নির্বাসনে যাওয়া যদি বন্ধ না করে, উচিত বাবুরা যদি আজীবন কানে তালা ঝুলিয়ে রাখে তাহলে হয়তো আর কখনও ন্যায়ের ভোর হবেনা ।তাহলে চরম অরজগতা আর অনিয়মের এ স্বর্গ ভাল মানুষদের জন্যতো হবে নিঃসন্দেহে নরকবাস ।
আরও নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন
আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন





সরি (Sorry) এর ব্যবহার ও অপব্যবহার

ইংরেজি Sorry শব্দটির বহূল ব্যববহার লক্ষনীয় ।আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা ক্ষেত্রে এ Sorry শব্দটি অনায়াশে ব্যবহার করি। Sorry শব্দটি আমাদের কাছে অনেকটা ডাল ভাতের মত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।সাধারনত ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কোন ভুল বা অন্যায় করলে অথবা আমাদের আচরনে কেউ মনে কষ্ট পেলে আমরা সাধারনত Sorry শব্দটি দিয়েই সবকিছু মালিশ করে দিই।ছোট, মাঝারি, বড় যে কোন ধরনের ভুল, অন্যায় বা ত্রুটির জন্য Sorry শব্দটিকে আমরা উৎকৃষ্টমানের অস্ত্র বা নিকৃষ্টমানের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করি। দৈনন্দিন জীবনে এ Sorry শব্দটি দিয়ে আমরা আমাদের হাজার রকমের অপরাধ, অপকর্ম, ভুল ত্রুটি নিমিষেই জায়েজ করে নিতে পারি । Sorry শব্দটি উচ্চারনগত দিক থেকে সহজ হওয়ায় শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলেই এ শব্দটি ব্যবহার করে যে যার মত পার পেতে চেষ্টা করি এবং পেয়েও যাই । Sorry শব্দটি ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ঘটনার উল্লেখ নাই যে শুধু ওসব ঘটনা ঘটলে ব্যবহার করা যাবে। এর ব্যবহারের জন্য কোন দিন ক্ষন নেই যে শুধু ঐ দিন বা ঐ সময় এটি ব্যবহার করা যাবে ।এটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির কথা বলা নেই যে শুধু ঐসকল ব্যক্তি বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এগুলি ব্যবহার করা যাবে ।সুতরাং Sorry এর ব্যবহার সর্বত্র, সবসময়, সর্বক্ষেত্রে ছিল আছে এবং থাকবে।

এখন চলুন দেখি Sorry দিয়ে কী সব কিছুই মিটিয়ে ফেলা যায়? ধরুন দু’জন ব্যক্তি পাশাপাশি বসে কোন অনুষ্ঠান দেখছে। অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে একজনের একটু আয়েশ করে বসার ইচ্ছা হল ।আর আয়েশ করার খায়েশ মিটানোর জন্য পায়ের উপর পা তুলে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে জুতার সোলে থাকা কাঁদা পাশের জনের ধবধবে পায়জামায় লেগে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত ভদ্রলোকের নিশ্চয়ই তাৎক্ষনিক রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক। ক্ষতিসাধনকারী ব্যক্তি বুঝতে পারলেন এটা করা তার ঠিক হয়নি তাই চট্ জলদি তিনি Sorry শব্দটি ব্যবহার করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভদ্রলোকের মনের ব্যথা তাৎক্ষনিক কিছুটা প্রশমিত করলেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে দুই আঙ্গুলের নখের টোকা দিয়ে পায়জামার ময়লা অপসারন করতে করতে ভদ্রতার খাতিরে Sorry ’র উত্তর দিতে গিয়ে বলছেন, না ঠিক আছে, কোন অসুবিধা নেই। ভদ্রলোকের বলার ধরন দেখে মনে হলো যেন জুতার সমস্ত ময়লা তাঁর পাঞ্জাবীতে লাগলেও তিঁনি কোন মাইন্ডই করতেননা ।আসলে ভদ্রলোক এমনই হয়। এবার অনুষ্ঠানের প্রতি মনোনিবেশ করায় তার মনেকষ্ট ৪/৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলনা ।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটি বড় টেবিলে বসে ৬-৮ জন কোথাও বা ৮-১০ জন মেহমানকে একই টেবিলে বসে ক্ষেতে হয় ।টেবিল ভর্তি হরেক রকম মনলোভা খাবার বাটিতে সাজানো আছে ।সবাই প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে খাওয়ায় ব্যস্ত ।টেবিলের এক কোণ থেকে হঠাৎ বজ্রপাতের মত একটি আওয়াজ ‘হাঁ….চ্ছি..ও’।নিমিশেই যা ঘটার তাই ঘটল। যিঁনি ‘হাঁ….চ্ছি..ওর’ ঘটনা ঘটালেন তার মুখের মধ্যে থাকা আধা চর্বনকৃত খাবার মুখ থেকে বিদ্যুৎ গতিতে বের হয়ে মেহমানদের চেহারায়, সার্ট পাঞ্জাবীতে, প্লেটে এমনকি টেবিলে সংরক্ষিত অন্যান্য খাবারের বাটিতে গিয়ে পড়ল ।খাবারের এমন একটি পিক আওয়ারে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে সবাই মিলে তাকে গনপিটুনি দিয়েছে এমন খবর শুনলে তেমন আশ্চার্য় হওয়ার কিছু থাকতোনা।কিন্ত এখানে তা ঘটেনি কারন এখানে ছিল অধিকাংশই ভদ্রলোক ।যিঁনি ‘হাঁ….চ্ছি..ওর’ ঘটনা ঘটালেন তিনি দ্রুত Sorry বলে পরিস্থিতিকে আগুনে পানি ঢালার মত সকলের মুখকে শীতল করে দিলেন কিন্ত মনকে শীতল করতে পারলেনা ।Sorry বলে নিজেকে আপাতঃ রক্ষার নিকৃষ্ট কৌশল আয়ত্ব করলেও তিনি এরকম পরিস্থিতিতে মুখে হাত দিয়ে অন্যদেরকে নিরাপদ রাখার কমন সেন্স নামক উৎকৃষ্ট অস্ত্রটির ব্যবহার কখনও শিখেননি ।কী আর করা ভুক্তভোগীগণ যে যাঁর মত করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করলেন ।আয়েজকগণ আবার নতুন করে সব খাবারের আয়োজন করলেন। যিনি ঘটনা ঘটালেন তিনি সহ তিনজন নতুন করে মোটামুটি খেলেন, দু’জন খাওয়ার ভান করে ভদ্রতার খাতিরে বসে থাকলেন কিন্ত একজন খাওয়া দাওয়ার অপেক্ষা না করে তাৎক্ষনিক বিদায় হলেন । ঘটনার জন্য ভুক্তভোগী সকলের মনে কষ্ট ধীরে ধীরে কাটতে লাগল । বাড়িতে গিয়ে যে যার মত করে নিজে পরিচ্ছন্ন হলেন ও জামা কাপড় পরিস্কার করলেন। এবার স্বাভাবিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টির প্রতি মনেকষ্ট ১২/১৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলনা ।
একটি সমাজে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সুশিক্ষিত, কুশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ইত্যাদি নানা ধরনের মানুষ বসবাস করে ।কোন বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে স্বাভাবিক দ্বন্ধ, মতপার্থক্য, তর্ক বিতর্ক এমনকি ঝগড়া ফাসাদও হতে পারে।

একজন সত্যিকার উচ্চশিক্ষিত মানুষ যে কোন কর্মজীবনে সমাজের জন্য কিছু ভাল কাজ করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। কিন্ত কাজ করতে গিয়ে পারিপাশ্বিক নানা কারনে সবকিছু ব্যাটে-বলে নাও হতে পারে ।তাছাড়া ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, মূল্যবোধ, শিক্ষা, রুচি ইত্যাদির উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে ।ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে চিন্তা ভাবনার তারতম্য হেতু ভাল মন্দ বিচারেও তারতম্য ঘটে। একজন যেটাকে ন্যয় বলে গণ্য করেন, অন্যজন সেটাকেই সম্পূর্ন অন্যয় বলে মনে করতে পারেন ।আবার একজন প্রকৃত অর্থে সঠিক পথে থাকার কারনে অন্যের স্বার্থহানি ঘটতে পারে । এমতাবস্থায় যার স্বার্থহানি ঘটে তিনি ঐ পথকে সঠিক পথ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মত মহানুভভতা দেখাবেন এ সমাজে এটা আশা করা বাতুলতা মাত্র ।এরকম একটি দ্বন্ধে একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে একজন স্বল্পশিক্ষিত মানুষ যাচ্ছেতাই নিকৃষ্ট শব্দ ব্যবহারে লাশারা বেশারা ব্যবহার করে গায়ের ঝাল মিটালো, আর এমন একটি মহা অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে অপরাধী শুধু মাত্র একটি ‍Sorry শব্দ ব্যবহার করল ।শুধু ভদ্রতার খাতিরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ‍Sorry শব্দটিকেই উত্তম প্রায়শ্চিত্ত মনে করে আপাততঃ শান্তি লাভ করলেও হৃদয়ের গভীরের রক্ত ক্ষরন অন্ততঃ সেদিন পর্য়ন্ত চলার কথা যেদিন নিজ চক্ষে ঐ অপরাধীর সমান অপমান না দেখবে ।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী তার সারা জীবনের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে একটি বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্বাচিত হল ।শর্ত হল উক্ত শিক্ষার্থীকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে হবে তার অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ।শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে অর্জিত সকল সনদপত্রের কপি ও অন্যান্য প্রয়েজনীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ করতে হবে।কিন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রামাণ্য দলিল পত্রাদি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং যথাসময়ে অভিভাবককে না জানানোর গাফিলতির কারনে শিক্ষার্থীটি তার একটি ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় ।এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি Sorry শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে দায় এড়ালেন বটে, কিন্ত যারা Sorry শব্দটি দিয়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলতে চান তাদের কাছে প্রশ্ন, কী শব্দ ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী এ ক্ষতির কথা আজীবন ভুলে থাকবে এমন একটি শব্দ কেউ বলতে পারবেন কী ?
আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন
আরও নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন




Featured post

অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী স্মরণে।

অধ্যক্ষ এম এ বারী ছবিটি স্যারের জৈষ্ঠ পুত্র জনাব সাজ্জাদুল বারী ’র নিকট থেকে সংগৃহীত।  আমার প্রথম বস অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী। আজ থেকে ঊনত্রিশ...