সরি (Sorry) এর ব্যবহার ও অপব্যবহার

ইংরেজি Sorry শব্দটির বহূল ব্যববহার লক্ষনীয় ।আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা ক্ষেত্রে এ Sorry শব্দটি অনায়াশে ব্যবহার করি। Sorry শব্দটি আমাদের কাছে অনেকটা ডাল ভাতের মত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।সাধারনত ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কোন ভুল বা অন্যায় করলে অথবা আমাদের আচরনে কেউ মনে কষ্ট পেলে আমরা সাধারনত Sorry শব্দটি দিয়েই সবকিছু মালিশ করে দিই।ছোট, মাঝারি, বড় যে কোন ধরনের ভুল, অন্যায় বা ত্রুটির জন্য Sorry শব্দটিকে আমরা উৎকৃষ্টমানের অস্ত্র বা নিকৃষ্টমানের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করি। দৈনন্দিন জীবনে এ Sorry শব্দটি দিয়ে আমরা আমাদের হাজার রকমের অপরাধ, অপকর্ম, ভুল ত্রুটি নিমিষেই জায়েজ করে নিতে পারি । Sorry শব্দটি উচ্চারনগত দিক থেকে সহজ হওয়ায় শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকলেই এ শব্দটি ব্যবহার করে যে যার মত পার পেতে চেষ্টা করি এবং পেয়েও যাই । Sorry শব্দটি ব্যবহারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন ঘটনার উল্লেখ নাই যে শুধু ওসব ঘটনা ঘটলে ব্যবহার করা যাবে। এর ব্যবহারের জন্য কোন দিন ক্ষন নেই যে শুধু ঐ দিন বা ঐ সময় এটি ব্যবহার করা যাবে ।এটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির কথা বলা নেই যে শুধু ঐসকল ব্যক্তি বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে এগুলি ব্যবহার করা যাবে ।সুতরাং Sorry এর ব্যবহার সর্বত্র, সবসময়, সর্বক্ষেত্রে ছিল আছে এবং থাকবে।

এখন চলুন দেখি Sorry দিয়ে কী সব কিছুই মিটিয়ে ফেলা যায়? ধরুন দু’জন ব্যক্তি পাশাপাশি বসে কোন অনুষ্ঠান দেখছে। অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে একজনের একটু আয়েশ করে বসার ইচ্ছা হল ।আর আয়েশ করার খায়েশ মিটানোর জন্য পায়ের উপর পা তুলে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে জুতার সোলে থাকা কাঁদা পাশের জনের ধবধবে পায়জামায় লেগে গেল। ক্ষতিগ্রস্ত ভদ্রলোকের নিশ্চয়ই তাৎক্ষনিক রাগ হবে এটাই স্বাভাবিক। ক্ষতিসাধনকারী ব্যক্তি বুঝতে পারলেন এটা করা তার ঠিক হয়নি তাই চট্ জলদি তিনি Sorry শব্দটি ব্যবহার করে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভদ্রলোকের মনের ব্যথা তাৎক্ষনিক কিছুটা প্রশমিত করলেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে দুই আঙ্গুলের নখের টোকা দিয়ে পায়জামার ময়লা অপসারন করতে করতে ভদ্রতার খাতিরে Sorry ’র উত্তর দিতে গিয়ে বলছেন, না ঠিক আছে, কোন অসুবিধা নেই। ভদ্রলোকের বলার ধরন দেখে মনে হলো যেন জুতার সমস্ত ময়লা তাঁর পাঞ্জাবীতে লাগলেও তিঁনি কোন মাইন্ডই করতেননা ।আসলে ভদ্রলোক এমনই হয়। এবার অনুষ্ঠানের প্রতি মনোনিবেশ করায় তার মনেকষ্ট ৪/৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলনা ।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একটি বড় টেবিলে বসে ৬-৮ জন কোথাও বা ৮-১০ জন মেহমানকে একই টেবিলে বসে ক্ষেতে হয় ।টেবিল ভর্তি হরেক রকম মনলোভা খাবার বাটিতে সাজানো আছে ।সবাই প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে খাওয়ায় ব্যস্ত ।টেবিলের এক কোণ থেকে হঠাৎ বজ্রপাতের মত একটি আওয়াজ ‘হাঁ….চ্ছি..ও’।নিমিশেই যা ঘটার তাই ঘটল। যিঁনি ‘হাঁ….চ্ছি..ওর’ ঘটনা ঘটালেন তার মুখের মধ্যে থাকা আধা চর্বনকৃত খাবার মুখ থেকে বিদ্যুৎ গতিতে বের হয়ে মেহমানদের চেহারায়, সার্ট পাঞ্জাবীতে, প্লেটে এমনকি টেবিলে সংরক্ষিত অন্যান্য খাবারের বাটিতে গিয়ে পড়ল ।খাবারের এমন একটি পিক আওয়ারে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে সবাই মিলে তাকে গনপিটুনি দিয়েছে এমন খবর শুনলে তেমন আশ্চার্য় হওয়ার কিছু থাকতোনা।কিন্ত এখানে তা ঘটেনি কারন এখানে ছিল অধিকাংশই ভদ্রলোক ।যিঁনি ‘হাঁ….চ্ছি..ওর’ ঘটনা ঘটালেন তিনি দ্রুত Sorry বলে পরিস্থিতিকে আগুনে পানি ঢালার মত সকলের মুখকে শীতল করে দিলেন কিন্ত মনকে শীতল করতে পারলেনা ।Sorry বলে নিজেকে আপাতঃ রক্ষার নিকৃষ্ট কৌশল আয়ত্ব করলেও তিনি এরকম পরিস্থিতিতে মুখে হাত দিয়ে অন্যদেরকে নিরাপদ রাখার কমন সেন্স নামক উৎকৃষ্ট অস্ত্রটির ব্যবহার কখনও শিখেননি ।কী আর করা ভুক্তভোগীগণ যে যাঁর মত করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করলেন ।আয়েজকগণ আবার নতুন করে সব খাবারের আয়োজন করলেন। যিনি ঘটনা ঘটালেন তিনি সহ তিনজন নতুন করে মোটামুটি খেলেন, দু’জন খাওয়ার ভান করে ভদ্রতার খাতিরে বসে থাকলেন কিন্ত একজন খাওয়া দাওয়ার অপেক্ষা না করে তাৎক্ষনিক বিদায় হলেন । ঘটনার জন্য ভুক্তভোগী সকলের মনে কষ্ট ধীরে ধীরে কাটতে লাগল । বাড়িতে গিয়ে যে যার মত করে নিজে পরিচ্ছন্ন হলেন ও জামা কাপড় পরিস্কার করলেন। এবার স্বাভাবিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ায় বিষয়টির প্রতি মনেকষ্ট ১২/১৪ ঘন্টার বেশি স্থায়ী হলনা ।
একটি সমাজে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সুশিক্ষিত, কুশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, উচ্চ শিক্ষিত ইত্যাদি নানা ধরনের মানুষ বসবাস করে ।কোন বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে স্বাভাবিক দ্বন্ধ, মতপার্থক্য, তর্ক বিতর্ক এমনকি ঝগড়া ফাসাদও হতে পারে।

একজন সত্যিকার উচ্চশিক্ষিত মানুষ যে কোন কর্মজীবনে সমাজের জন্য কিছু ভাল কাজ করবে এটাই সকলের প্রত্যাশা। কিন্ত কাজ করতে গিয়ে পারিপাশ্বিক নানা কারনে সবকিছু ব্যাটে-বলে নাও হতে পারে ।তাছাড়া ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, মূল্যবোধ, শিক্ষা, রুচি ইত্যাদির উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে ।ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে চিন্তা ভাবনার তারতম্য হেতু ভাল মন্দ বিচারেও তারতম্য ঘটে। একজন যেটাকে ন্যয় বলে গণ্য করেন, অন্যজন সেটাকেই সম্পূর্ন অন্যয় বলে মনে করতে পারেন ।আবার একজন প্রকৃত অর্থে সঠিক পথে থাকার কারনে অন্যের স্বার্থহানি ঘটতে পারে । এমতাবস্থায় যার স্বার্থহানি ঘটে তিনি ঐ পথকে সঠিক পথ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার মত মহানুভভতা দেখাবেন এ সমাজে এটা আশা করা বাতুলতা মাত্র ।এরকম একটি দ্বন্ধে একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে একজন স্বল্পশিক্ষিত মানুষ যাচ্ছেতাই নিকৃষ্ট শব্দ ব্যবহারে লাশারা বেশারা ব্যবহার করে গায়ের ঝাল মিটালো, আর এমন একটি মহা অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে অপরাধী শুধু মাত্র একটি ‍Sorry শব্দ ব্যবহার করল ।শুধু ভদ্রতার খাতিরে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ‍Sorry শব্দটিকেই উত্তম প্রায়শ্চিত্ত মনে করে আপাততঃ শান্তি লাভ করলেও হৃদয়ের গভীরের রক্ত ক্ষরন অন্ততঃ সেদিন পর্য়ন্ত চলার কথা যেদিন নিজ চক্ষে ঐ অপরাধীর সমান অপমান না দেখবে ।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত একজন শিক্ষার্থী তার সারা জীবনের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে একটি বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য একটি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্বাচিত হল ।শর্ত হল উক্ত শিক্ষার্থীকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে হবে তার অধ্যয়নরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক ।শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে অর্জিত সকল সনদপত্রের কপি ও অন্যান্য প্রয়েজনীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ করতে হবে।কিন্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রামাণ্য দলিল পত্রাদি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং যথাসময়ে অভিভাবককে না জানানোর গাফিলতির কারনে শিক্ষার্থীটি তার একটি ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয় ।এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি Sorry শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে দায় এড়ালেন বটে, কিন্ত যারা Sorry শব্দটি দিয়ে সবকিছু মিটিয়ে ফেলতে চান তাদের কাছে প্রশ্ন, কী শব্দ ব্যবহার করলে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী এ ক্ষতির কথা আজীবন ভুলে থাকবে এমন একটি শব্দ কেউ বলতে পারবেন কী ?
আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন
আরও নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন




Popular posts from this blog

রোহিঙ্গা বনাম নন এমপিও শিক্ষক || প্রসঙ্গ : মানবতা ||