Tuesday, September 18, 2018

আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব : আকর্ষণীয় গুণের সমাহার |

ইংরেজি ‘Personality’ শব্দ’র আভিধানিক অর্থ হলো ‘ব্যক্তিত্ব’ ।আর ‘ব্যক্তিত্ব’ বলতে একজন ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোর বিশ্লেষিত সামগ্রিক মূল্যায়ন বা ফলকে বুঝায় ।একজন ব্যক্তির মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় এগুলি সাধারণত ব্যক্তি যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে বা বসবাস করে সে পরিবেশ থেকে অর্জিত হয় । একজন ব্যক্তির মধ্যে ভাল মন্দ দু’ধরনের বৈশিষ্ট্যই কম বেশি থাকতে পারে । মহা মনীষীদের কথা বাদ দিলে প্রত্যেক সাধারণ ব্যক্তি বা মানুষই অল্প বিস্তর দোষ-গুণের সমন্বয়ে গঠিত । এসব দোষ-গুণের মাত্রা বা পরিমানের উপরই একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় । অর্থাৎ ভাল এবং মন্দ বৈশিষ্ট্যের সমষ্টির বিয়োগফলই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিমাপের সাধারণ ও সহজ উপায় ।

বাস্তব জীবনে আমরা ‘ব্যক্তিত্ববান’ ও ‘ব্যক্তিত্বহীন’ শব্দ দু’টির বহুল ব্যবহার দেখলেও বাস্তবে কোন মানুষই ‘ব্যক্তিত্বহীন’ নয় । প্রত্যেক মানুষেরই ব্যক্তিত্ব আছে শুধু পার্থক্য হলো কারও ব্যক্তিত্ব সবল বা আকর্ষণীয় (Strong Personality) আর কারও ব্যক্তিত্ব দুর্বল বা আকর্ষণহীন (Weak Personality) । যাঁদের দোষ বা মন্দের চেয়ে গুণ বা ভাল বৈশিষ্ট্য বেশি তাঁরা সবল ব্যক্তিত্ব বা Strong Personality ’র অধিকারী আর এর বিপরীত বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তিগণ দুর্বল ব্যক্তিত্ব বা Weak Personality ’র অধিকারী ।

যে সকল বৈশিষ্ট্য ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিমাপের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলির মধ্যে ব্যক্তির চালচলন, আচার ব্যবহার, কথা বার্তা, চিন্তা ভাবনা, রুচি পছন্দ, সততা, ন্যায় পরায়নতা, দৃষ্টিভঙ্গী, বিশ্বাস, প্রকাশ ভঙ্গি, কমন সেন্স, স্বার্থপরতা, দায়িত্বশীলতা, কর্ম দক্ষতা, নেতৃত্বদান ক্ষমতা, ধৈর্য্য, সহনশীলতা, সমর্থন, বিরোধীতা, দৃঢ়তা, ক্ষমা প্রদর্শন, স্থান-কাল-পাত্র জ্ঞান, শারিরীক ভাষা ইত্যাদি সহ আরও বহু বহু বিষয় জড়িত রয়েছে ।এসব বিষয়ের অধিকাংশগুলিতে যখন ব্যক্তির গুণ প্রকাশ পাবে তখন তাঁকে বলা যাবে সবল ব্যক্তিত্বের বা Strong Personality ’র অধিকারী ।

সবল বা দুর্বল যাই বলিনা কেন ব্যক্তিত্ব কখনও গায়ের জোরে বা আত্ন প্রচারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার বিষয় নয় । এটি সম্পূর্ন অনুশীলন পূর্বক অর্জনের বিজয় ।আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের নানা কর্মকান্ডের মধ্যেই আমাদের ব্যক্তিত্বের ধরন ফুটে ওঠে । শুধুমাত্র ভাবগম্ভীর হয়ে থেকে অন্যদের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে স্বল্পভাষী হলেই যদি উত্তম ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া যেত তাহলে এ সহজ পন্থাটি আয়ত্ব করে সবাইতো সবল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে যেত ।নিজেকে পরিপাটি করে অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার নাম যেমন উত্তম ব্যক্তিত্ব নয়, তেমনি অকারনে, অকাতরে, যত্র তত্র, যেন তেন ভাবে নিজেকে উজাড় করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন করার নামও উত্তম ব্যক্তিত্ব নয় ।

প্রাত্যহিক জীবনে আমরা কারণে অকারণে, ইচ্ছায় অনিশ্চায় একে অন্যের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি । এ ব্যক্তিত্ব যুদ্ধে আমরা উভয়ই নিজেকে ব্যক্তিত্ববান প্রমাণ করতে নানা রকম যুক্তি, তর্ক, উপমা ইত্যাদি ব্যবহারে মরিয়া হয়ে উঠি । আবার একে অপরকে ব্যক্তিত্বহীন প্রমাণ করতেও যেকোন ধরনের যুক্তির সঙ্গে কুযুক্তি প্রদর্শনেও দ্বিধা করিনা । কিন্ত একথা আমরা ভুলে যাই যে, নিজেকে ব্যক্তিত্ববান প্রমাণে তর্কে বা ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়াও দুর্বল ব্যক্তিত্বেরই নামান্তর ।

প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে গুণ যেমন আছে তেমনি দোষও আছে । কিন্ত দোষযুক্ত যে দেহ বা মনে গুণ খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে সে ব্যক্তি হয়তো অনেক সুন্দর হতে পারে কিন্ত সবল ব্যক্তিত্বের অধিকরী হতে পারেনা । প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই একটা পশু শক্তি কাজ করে, এ পশু শক্তিকে যিঁনি যত বেশি অবদমন করতে পারেন তিঁনি তত উত্তম ব্যক্তিত্বের অধিকারী । 

লেখক : এ এস এম কামাল উদ্দিন