Friday, December 7, 2018

একটি মোবাইল, অনেকগুলি দুর্ঘটনা | প্রসঙ্গঃ অরিত্রি’র আত্মহত্যা |


১৯৭৫
সালের কথা আমি তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব আবদুল হালিম যাঁকে সবাই একজন নীতি পরায়ন, যোগ্য এবং সুশিক্ষক হিসেবেই জানতো | সে বছর স্কুলের কনস্ট্রাকশন কাজের জন্য বালি এনে স্কুল ক্যাম্পাসে একটি একতলা বিল্ডিং এর ছাদে রাখা হয়েছে | আমারই একজন সহপাঠি বিরতির সময় বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে খেলার ছলে পা দিয়ে বালিগুলি নিচে ফেলছে | প্রধান শিক্ষক হালিম স্যার এটা দেখে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে দশ বেত লাগিয়েছেন | ছাত্রটি কান্না করতে করতে বাড়িতে গেলে তার জেঠা কিছুক্ষনের মধ্যেই ধেয়ে এসে লাঠি দিয়ে প্রধান শিক্ষককে আঘাত করেন | তার পর অবশ্য ব্যক্তির যে কঠিন শাস্তি হয়েছিল তা এখানে উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম |
১৯৭৬ সালের কথা | আমি বসুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র | তৎকালীন এমপি জনাব আবু নাছের চৌধুরীর কন্যাও ছিল আমাদের সহপাঠী | বাবু পুর্নেন্দ্র শেখর পাল (পুর্নেন্দ্র বাবু স্যার) আমাদের বাংলা ব্যাকরণ পড়াতেন| যারা পুর্নেন্দ্র বাবু স্যার এর স্টুডেন্ট তারা ভাল করেই স্যারের শাস্তি সম্পর্কে জানেন | বাড়ির কাজ-পরদিন ২০ টি তৎসম উপসর্গ (প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দূর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, ) মুখস্ত করে আসতে হবে নাহলে কঠিন শাস্তি| প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মোশারফ হোসেন (মশু মিয়া) স্যারের স্কুলে সকল বিষয়ের পড়াই ছিল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ন | আটটি বিষয়ের পড়া আবার তারসঙ্গে জটিল কঠিন বিদঘুটে বিশটি উপসর্গ মুখস্ত করে ধরে রাখা বয়সে কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি |
পরদিন পুর্নেন্দ্র বাবু স্যার ক্লাসে ঢুকলেন| পিন পতন নিরবতা| যারা পড়া শিখে আসেনি তাদের দাঁড়াতে বললেন |এক সঙ্গে ক্লাসের ছাত্র ছাত্রী সবাই দাঁড়ালো | ক্যাপ্টেনকে পাঠিয়ে দুটি বেত আনালেন | দুটি বেত একসঙ্গে করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবার দুইহাতে স্যারের সর্বশক্তি দিয়ে চারটি করে বেত মারলেন | কোন স্বজনপ্রীতি নেই | বেত্রাঘাত থেকে বাদ যায়নি এমপি কন্যাও কিন্ত এমপি সাহেবকে টু শব্দটিও করতে শুনিনি |একজনের হাত ফেটে একটু রক্তও বের হয়েছিল | পুর্নেন্দ্র বাবু স্যার এর সে বেত্রাঘাতই আমাকে ২০ টি উপসর্গ মুখস্ত করতে বাধ্য করেছিল যা আমি আজও আধা নিঃশ্বাসে মুখস্ত বলতে পারি | স্যার এর বেতের আঘাত খাওয়া কোন শিক্ষার্থী দুঃখে, কষ্টে বা লজ্জায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়নি | তাঁর অনেক ছাত্র আজও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ন পদে আসীন আছেন |

গতকাল আমার কলেজের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম | প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত একশ আঠারো জন পরীক্ষার্থী যাদের সকলেই ছাত্রী | যে কক্ষটিতে তিনশ শিক্ষার্থী এক সঙ্গে বসে ক্লাস করতে পারে সে কক্ষটির আয়তন সবার কাছে সহজেই অনুমেয় হওয়ার কথা | কক্ষে আমরা তিনজন ইনভিজিলেটর | ক্লাস নিয়ন্ত্রন আর পরীক্ষা কক্ষ নিয়ন্ত্রনের মধ্যে যে বেজায় পার্থক্য রয়েছে সে বিষয়ে কম-বেশি সকলেরই বুঝবার কথা | বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাকে যখন থেকে পাবলিক পরীক্ষার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তখন থেকেই নানা কারণে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবক সহ কম বেশি সকল পক্ষই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিক্ষায় অসাধু কর্মকান্ডকে সমর্থন করতে শুরু করেছেন | একই ধরনের পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেসব শিক্ষার্থী জেএসসি, এসএসসি পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষায় এসেছে তারা অনুগত শিক্ষার্থীর মত পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে পরীক্ষা দেবে এমনটি আশা করা বাতুলতা মাত্র | প্রায় তেইশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে পরীক্ষার দায়িত্ব যেভাবে পালন করেছি গতকালের দায়িত্ব সেভাবে পালন করতে পারিনি | মনে কিছুটা সাহস হারিয়েছি | কারণ একটাই, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যা এবং অতঃপর…..
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের শিক্ষার্থী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় সকলের মত আমিও মর্মাহত | শুধু একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, শুধু একজন অভিভাবক হিসেবে নয়, একজন পিতা হিসেবে আমি অত্যন্ত মর্মাহত | আমার বড় মেয়েও ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী | অরিত্রির বয়সী আমার অপর মেয়ে মতিঝিল গভঃ গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে | জেএসসি পাশ করার পর আমার এবং আমার স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল তাকেও ভিকারুননিসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চেষ্টা করবো | কিন্ত স্কুল কলেজের প্রভাতী দিবা শাখার কারণে আমার দুই মেয়ে একসঙ্গে আসা যাওয়ার সিডিউলটা মেলানো যায়নি বলে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মতিঝিল গভঃ গার্লস হাই স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করি |
অরিত্রি আমার মেয়ের মত | শুনেছি শিক্ষক কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে অপমানের বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে আত্মাহুতি দিয়েছে | বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয় বিদারক | কিন্ত কেন এই আত্মহত্যা ? পৃথিবী থেকে একবার চলে গেলে আর ফেরা যায়না অরিত্রি কী এটা বুঝতোনা ? যার জীবন বলতে গেলে মাত্র শুরু, সুন্দর পৃথিবীকে উপভোগ করা যার এখনও শুরুই হয়নি সে কেন সব কিছু ছেড়ে অকালে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ? অরিত্রি নিঃসন্দেহে মেধাবী মেয়ে | মেধাবীরাতো নিজের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক স্বপ্ন আঁকে | মা-বাবা, ভাই-বোন নিয়ে থাকে এদের অনেক স্বপ্নগাঁথা | সমাজ বিনির্মানে এদের থাকে অনেক পরিকল্পনা | দেশ গঠনে এদের থাকে অনেক কাল্পনিক প্রতিশ্রুতি | তাহলে অরিত্রির তো এসব স্বপ্ন থাকার কথা | এক জীবনে একজন মানুষ পৃথিবীর জন্য কত ভাল কিছু করে নিজেকে অমর করে যেতে পারে সেসব মানুষের কাহিনী কী সে শুনেনি? আত্নহত্যা করলে কি হয় তা বয়সে তার জানার কথা, অরিত্রির পিতা-মাতার সঙ্গে তার কী কোনদিন কোন প্রসঙ্গেই এসব নিয়ে গল্প হয়নি? বয়সে যেটুকু ইমোশন থাকার কথা সে কি তার চেয়েও বেশি ইমোশনাল ছিল? এসব নানা প্রশ্ন যখন আমার মাথায় আসছিল তখন ভাবছিলাম সে যদি আমার মেয়ের ক্লাসমেট হতো তাহলে সেদিন যা ঘটেছিল সে সম্পর্কে হয়তো আরও সঠিক তথ্য জানার সুযোগ হতো |
অরিত্রির অপরাধ পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে আসা | আমার মেয়ের পড়ার সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির কিছু নিয়ম কানুন সম্পর্কে আমারও জানা হয়েছে | আমি আমার মেয়েদেরকে একটি গ্রহনযোগ্য স্বাধীন অথচ শৃংখলার পরিবেশের মধ্যে গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছি | জানিনা সেকারণে হয়তো সে ভিকারুননিসার অধিকাংশ নিয়ম কানুন, শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি শিক্ষার মানকে সমর্থন করে যা ইদানিং অন্যেরা সমালোচনা করছে | পরিস্থিতির কারণে আমিও চাই আমার মেয়ের কাছে একটি মোবাইল থাকুক যাতে সে কলেজে পৌঁছেই বাসায় জানিয়ে দিতে পারে | বাসায় আসতে দেরি হলে যেন ফোন দিয়ে জানতে পারি সে অমুক জায়গায় জ্যামের মধ্যে আছে | কিন্ত নিয়ম ভঙ্গ করে আমার মেয়ে মোবাইল নিতে চায়না বলে সেটা সম্ভব হয়নি | আমি ভেবে দেখলাম যদি নিয়মটি না থাকতো তাহলে প্রতিষ্ঠানটির পনের হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে মোবাইল আনা থেকে জন বিরত থাকতো? অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির শৃংখলা, পড়া-লেখার পরিবেশ এগুলি কোথায় গিয়ে পৌঁছতো? তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে থাকুক বা না থাকুক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মোবাইল নিয়ে না আসার নিয়মতো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার জন্য, শিক্ষার্থীর জন্য, শিক্ষার মানের জন্য,শিক্ষার পরিবেশের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে এটা সকল সচেতন মহলই সমর্থন করার কথা |
বর্তমানে শিক্ষার গুণগত মান হ্রাস পাওয়ার পেছনে অন্যান্য কারণের মধ্যে মোবাইল অন্যতম | আমি যতদূর জানি শুধু ভিকারুননিসা নয় শহরের নামী দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল নিয়ে ক্লাসে আসা একটা অপরাধ | কিন্ত যদি কেউ অপরাধ করে তাকে প্রথম দফায়ই টিসি দিয়ে বিদায় দেয়ার মত শাস্তি অবশ্যই অমানবিক | তাই শিক্ষার্থীকে কোন অন্যায়ের শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠানকে শিক্ষার্থীর মান সম্মানবোধ, বয়স এসবকিছু বিবেচনা করা উচিত এটাও ঠিক যে আমাদের কিছু শিক্ষক আছেন যারা নানা কারণে ইচ্ছা করেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক সুলভ আচরণ করেননা একজন সুশিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীদেরকে নিজের সন্তানের মত বা নিজের ভাই বোনের দৃষ্টিতে দেখা শিক্ষক হিসেবে শুধু শাসক হওয়ার মধ্যে কোন কৃতিত্ব নেই। কাউন্সেলিং করে একজন বিপথগামীকে পথের দিশা দিতে পারাই একজন প্রকৃত শিক্ষকের কৃতিত্ব। শুনেছি অরিত্রিকে পরীক্ষার কক্ষে মোবাইল আনার অপরাধে কর্তৃপক্ষ টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় এবং তার সামনে তার পিতামাতাকে অপমান করা সহ্য করতে না পারার আবেগই তাকে আত্মহত্যার প্রতি অনুপ্রাণিত করেছে | তাই যদি সত্য হয় তবে একজন সত্যিকার শিক্ষকের নিকট থেকে এমন আচরণ মোটেই কাম্য নয়
বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়েছে, শুনেছি প্রতিষ্ঠান প্রধান সহ তিনজন শিক্ষক বরখাস্ত হয়েছেন, শ্রেণি শিক্ষক গ্রেপ্তার হয়েছেন | অনেক দাবি নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ আন্দোলন করছেন | কেউ হয়তো ঘর পোড়ার মধ্যে আলু পোড়া দেয়ার সুযোগ নিতে চেষ্টাও করছেন | ফেসবুকে কিছু মানুষ প্রতিষ্ঠানটির নাম নিয়ে পাকিস্তানের গন্ধ ছড়ানোর চেষ্টা করছেন | সত্যিই সব কিছুই দুর্ভাগ্যজনক | শুধু ভিকারুননিসা নয় ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালভাবে না জেনে হুটহাট মন্তব্য করা উচিত নয় | কারণ এর সঙ্গে জড়িত থাকে অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের অনেক সাফল্য গাঁথা, অনেক স্বপ্ন গাঁথা | প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহন করে যারা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় অনেক উঁচু স্থানে নিজেদেরকে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছেন প্রতিষ্ঠানটির ভাবমুর্তি নষ্ট হলে তাদের হৃদয়কেও ব্যথিত করবে | ব্যক্তি দোষকে প্রতিষ্ঠানের সম্মানের সঙ্গে একাকার করা উচিত নয়| ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল, বুয়েট সহ যেসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করার অনেকের স্বপ্ন থাকে ভিকারুননিসাও তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান | এতকিছুর পরও দেখবেন আগামী বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক ভর্তির স্বপ্নের তালিকায় ভিকারুননিসাকে প্রথম দিকেই রাখবেন |
মামলাধীন বিষয়টির সঠিক তদন্ত হোক, সত্যিকার দোষী ব্যক্তি শাস্তি পাক এটাই কাম্য | একই সঙ্গে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রতিষ্ঠান প্রধান তথা শিক্ষককে বরখাস্ত, বেতন বন্ধ, গ্রেপ্তার ইত্যাদি কারণে যদি ভবিষ্যতে শিক্ষর্থীকে ন্যুনতম নিয়ন্ত্রন করতে শিক্ষকগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তাহলে শিক্ষায় মহা বিপদ দেখা দিতে পারে, গতকাল আমি যেমনটা হারিয়েছিলাম | আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, ঘটনার জন্য গৃহীতব্য সম্ভাব্য ব্যবস্থা সঠিক না হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে যদি শিক্ষর্থীগণ অবাধে মোবাইল নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে অনুপ্রাণিত হয় তাহলে শিক্ষা এবং শিক্ষার পরিবেশের নিশ্চিত সর্বনাশ ঘটবে |একটি মোবাইল অনেক বিপদের জন্ম দিয়েছে | ভবিষ্যতে কোন মোবাইল যেন অনেক সর্বনাশের কারণ না হয় এটাই কাম্য | অরিত্রি আত্মার শান্তি কামনা করছি | অরিত্রি পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি |
লেখকঃ এস এম কামাল উদ্দিন (কলেজ শিক্ষক)