Thursday, November 30, 2017

ক্যাডার নন-ক্যাডার পদমর্যাদার দ্বন্দ্ব : তিরস্কার নয়, আলোচনাই হোক সমাধান ।

ক্যাডার নন-ক্যাডার পদমর্যাদার দ্বন্দ্ব : তিরস্কার নয়, আলোচনাই হোক সমাধান ।

একটি প্রবাদ আছে, ‘মক্কায়ও চোর আছে, লঙ্কায়ও  ভিখারী আছে ।’ আসলে  ভাল   বা  মন্দ  সব জায়গায়ই  আছে,  পার্থক্য  শুধু সংখ্যায় কম আর বেশি । দু’এক জন  দূর্নীতিবাজ  রাজনৈতিক ব্যক্তির কারনে বলা যাবেনা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিই দূর্নীতিবাজ । দু’এক জন অসৎ পুলিশের কারনে বলা যাবেনা সব পুলিশই অসৎ । দু’এক  জন  চরিত্রহীন শিক্ষকের কারনে  বলা  যাবেনা  সব সব শিক্ষকই  চরিত্রহীন । সার্টিফিকেট থাকলে  শিক্ষিত বলা  যায় কিন্ত সুশিক্ষিত হওয়া ভিন্ন জিনিষ ।

ইদানিং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্যাডার-নন ক্যাডার বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে । চলছে কর্ম বিরতি এমনকি সভা সমাবেশও । ক্যাডার মর্যাদা পাওয়া-দেওয়া নিয়ে যে যার মত করে যুক্তি দিচ্ছেন, তর্ক করছেন । যে কোন বিষয় নিয়ে যুক্তি তর্ক থাকবে এটা যেমন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার । কিন্ত পেশা ভেদে এ যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের পদ্ধতির মধ্যেও পার্থক্য থাকবে এটাও তেমনি একটা স্বাভাবিক ব্যাপার । শ্রমজীবি মানুষের যুক্তি তর্ক আর বুদ্ধিজীবি মানুষের যুক্তি তর্ক একই রকম হলে মানুষ চিনবে কীভাবে কে শ্রমজীবি? আর কে বুদ্ধিজীবি? অবশ্যই উপস্থাপন, প্রকাশ ভঙ্গী, শব্দ চয়ন, বডি লেংগুয়েজ, সহনশীলতা ইত্যাদির মাধ্যমে । ইদানিং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ক্যাডার-নন ক্যাডার বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে সেখানেও পেশার সর্বোচ্চ মর্যাদা রক্ষা করেই যুক্তি তর্ক হবে এটাইতো কাম্য হওয়ার কথা । বাঘ আর সিংহের ভাগাভাগির লড়াইয়েও শেষ পর্যন্ত কম্প্রোমাইজ হয় । এক পর্যায়ে উভয় উভয়কে মেনে নেয় । ক্যাডার নন-ক্যাডার দ্বন্দের অবসানও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হতে পারতো, কাদা ছোড়াছুড়ি করে নয় । কিন্ত দুঃখ জনক ভাবে সত্য যে, আমরা নিজেরা নিজেদেরকে সর্বোচ্চ শিক্ষিত, বিজ্ঞ, মেধাবী দাবি করে সম পেশার অন্যদেরকে হেয় করছি অনেকটা নির্বোধের মতই ।
বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় ৮০ শতাংশ সেবাই প্রদান করছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এখানে রয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারী । দেশের অধিকাংশ বড় বড় কর্মকর্তাগণ বেশিরভাগই এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাগ্রহনকারী । বিশেষকরে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি (পাস) পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা সেবার সিংহভাগই পূরন করে বেসরকারি শিক্ষা খাত । দেশের পাবলিক বিশ্বদ্যিালয়গুলোতেও উল্লেখযোগ্য হারে মেধার স্বাক্ষর রাখছে এসব নন-গভর্নমেন্ট এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনের শিক্ষার্থীরা ।আমাদের দেশে সবচাইতে সনামধন্য এবং শিক্ষা ও ফলাফলের দিক থেকে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষ এখনও নটরডেম কলেজ, ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজ, হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ সহ সারা দেশের এরকম আরও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই বুঝে ।এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি হওয়ায় এখানে কোন ক্যাডার শিক্ষক নেই ।মজার বিষয় হলো এসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়েই অনেকে ক্যাডার হচ্ছেন ।

উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমান পরীক্ষায় উর্তীর্ন হয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল এমনকি ওয়াল্ড র‌্যাঙ্কিং তালিকার শীর্ষের দিকে থাকা ব্র্যাক, নর্থ সাউথ ইত্যাদি ইউনিভারসিটিতে যারা চান্স পাচ্ছে তাদের সংখ্যা জেনে নিলে বুঝা যাবে এক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষার অবদান মোটেই অবজ্ঞা বা অবহেলা করার মত নয় । প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে বের হচ্ছে । মেধার দিক থেকে এরা প্রায় সম পর্যায়ের ।এসব হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষায় অংশ গ্রহনও করছে ।আমাদের দেশে সরকারি চাকুরির বাজার সীমিত হওয়ায় বিসিএস পরীক্ষায় চুড়ান্তভাবে উর্তীর্ন অল্প সংখ্যক মানুষের চাকুরি হচ্ছে ।অন্যদিকে প্রশ্ন সংক্রান্ত কেলেংকারীর কথা আলোচনায় নাইবা আনলাম কিন্ত কোটা প্রথার ফলে অনেকের যোগ্যতা থাকা সত্বেও ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যাচ্ছে একথাতো অস্বীকার করার মত নয়।

যারা প্রায় সম যোগ্যতার হয়েও বিসিএস কোয়ালিফাই করতে পারেননি তাদের অধিকাংশই চলে যায় বেসরকারি শিক্ষা পেশায়, কেউ যায় ব্যাংকিং বা বীমা পেশায়, কেউ সাংবাদিতা পেশায়, কেউ আইন পেশায়, কেউ যায় দেশী বিদেশী কোম্পানীতে, কেউ যায় এনজিও সহ অন্যান্য পেশায় । এসব যায়গায় থাকা অবস্থায় অনেকে ক্যাডার বা নন ক্যাডার জবের জন্য চেষ্টা করে সফলও হয় । কেউ নানা কারনে সংশ্লিষ্ট পেশায়ই থেকে যায় বা কোথাও যাওয়ার চেষ্টাও করেনা । বিগত ৩৫তম বিসিএস এ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উর্তীর্ন হয়েছিল ৫ হাজার ৫১৭ জন । তন্মধ্যে ২ হাজার ১৫৮ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল পিএসসি ।প্রায় একই যোগ্যতা সম্পন্ন অবশিষ্টদেরকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নন ক্যাডার পোস্টে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছিল । যতদূর জানি তাঁদের মধ্য থেকে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।তাহলে প্রায় একই যোগ্যতা থাকার পরও শুধু ক্যাডার পদ পাননি বলে তিঁনি কি ক্যাডারদের কাছে নিগৃহীত হবেন ?

আমাদের দেশে এমন প্রতিষ্ঠানও আছে যে প্রতিষ্ঠানের এখনও এমপিও হয়নি কিন্ত সে প্রতিষ্ঠানে এমন শিক্ষকও আছে যাঁর একাডেমিক রেজাল্ট, শিক্ষকতার দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, বিনয়, সততা, নিষ্ঠা, পেশার প্রতি আনুগত্য ইত্যাদি কোন কোন ক্যাডার শিক্ষককেও হার মানাবে । আবার আমাদের দেশে সদ্য বিসিএস কোয়ালিফাই করা আমাদের ছাত্র সমতুল্য এমন মেধাবী শিক্ষকও আছেন যাঁরা শিক্ষকতায় পঁচিশ বছর অতিবাহিত করা আমাদের মত শিক্ষককেও পড়াতে পারবেন ।

পরিশেষে একজন সম্মানিত ক্যাডার শিক্ষকের একটি কর্মের কথা বলেই শেষ করতে চাই ।লেখার শুরুতে দেয়া স্ক্রীনশটটি একজন সম্মানিত ক্যাডার শিক্ষকের ফেসবুক আইডি (তাঁর সম্মান রক্ষার্থে প্রোফাইল ফটো ও নামটি মুছে দিয়ে স্ক্রীনশটটি ব্যবহার করা হলো) । বর্তমানে ক্যাডার নন-ক্যাডার বিতর্কে জড়িয়ে পড়া সম্প্রতি জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষকগণকে হেয় করার উদ্দেশ্যে পোস্টটি দিয়ে মূলত তিঁনি সমগ্র বেসরকারি শিক্ষকগণকেই তিরস্কার করেছেন । তাঁর পোস্টটি দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিঁনি শিক্ষক হয়ে জাতিকে কী শিক্ষা দিচ্ছেন ।

প্রতিযোগিতা থাকবে, হার জিত থাকবে, তাই বলে যারা হারবে তাদের অপমান করতে হবে ? দু’টি শক্তিশালী দলের মধ্যে যখন ক্রিকেট খেলা হয়, তাদের এক দল যদি এক রানে জয়লাভ করে তাহলে কি পরাজিত দলকে বলা হবে তারা অযোগ্য ? বিসিএস ক্যাডারের চিন্তা আর রাজনৈতিক ক্যাডারের চিন্তা কি একই রকম হওয়া উচিত ?

একজন ক্যাডার শিক্ষকের নিকট থেকে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে তিরস্কারের এমন ভাষা কাম্য নয়। তাই আসুন  ভদ্র ও মার্জিত  ভাষায় এর প্রতিবাদ করি, নিন্দা  জানাই । ক্যাডার-নন ক্যাডার, সরকারি- বেসরকারি, দল-মত  নির্বিশেষে  সকল  স্তরের  শিক্ষক উৎকৃষ্ট ভাষায় এ ধরনের গর্হিত কাজের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করি । শিক্ষকতার মত মহান পেশাকে সকল নিকৃষ্টতার উর্ধ্বে রাখি ।

== এ এস এম কামাল উদ্দিন, বেসরকারি কলেজ শিক্ষক ।

Monday, November 27, 2017

শিক্ষা জাতীয়করণ: ২০১৮ সাল দাবি আদায়ের শ্রেষ্ঠ সময়

শিক্ষা জাতীয়করণ প্রসঙ্গ।।

জাতীয়করণের আন্দোলন শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ থাকলে জাতীয়করণ শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে । ফেসবুকের সঙ্গে বাস্তব ও দৃশ্যমান কর্মসূচী থাকতে হবে । পেশাজীবি সংগঠনগুলোর মধ্যে সকল সময়ই সরকার সমর্থিত এক বা একাধিক সংগঠন গড়ে ওঠে । এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মুখে দাবী আদায়ের স্লোগান থাকলেও মূল উদ্দেশ্য থাকে নেতা হওয়া এবং সরকার থেকে নানা ধরনের সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে দাবী আদায়ের আসল আন্দোলনকে বিনষ্ট করা । তাই আসল নকল চিনে পথ চলতে হবে ।এবার নকলদের পাতানো ফাঁদে পাঁ দিলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের সারাজীবন হায় হায় করতে হবে ।
বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করনের দাবী আদায়ের জন্য বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনে ২০১৮ সালই সর্বদিক থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত ও একমাত্র সেরা সময় । সময়ের ফোঁড় সময়ে না দিলে জাতীয়করণ হবে সোনার হরিণ । যদিও কিছু কিছু কর্মসূচীর কথা অনলাইন পত্রিকা দৈনিক শিক্ষা এবং কিছু ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ থেকে জানা যাচ্ছে । কিন্ত এসব কর্মসূচী সম্পর্কে সাধারন শিক্ষকদের মনে নানা রকমের সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে । বিগত ২/১ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে কিছু শিক্ষক সংগঠন জানুয়ারীতে পালন হবে এমন কিছু কঠিন কর্মসূচী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘোষনা করে থাকে । কিন্ত জানুয়ারী মাস যতই ঘনিয়ে আসে কর্মসূচী দাতাদের কঠিন কর্মসূচী ততই কোমল হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞাত কারনে এসব কর্মসূচী হিমাগারে চলে যায় ।
২০১৮ এর শেষে অথবা ২০১৯ এর প্রথমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ।নানাদিক থেকে এ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য সকল নির্বাচনের চেয়ে যে তাৎপর্যপূর্ন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।এ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পূনরায় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়া যেমন কঠিন হবে, তেমনি প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য ক্ষমতা ফিরে পাওয়া আরও কঠিন হবে ।আগামী নির্বাচনের উপরই নির্ভর করছে পরবর্তী বাংলাদেশের কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত ভবিষ্যত । আমার বিশ্বাস ষোল কোটি মানুষের এ দেশে দেশপ্রেমবোধ সম্পন্ন ক্ষমতাধর মানুষের অভাব নেই ।তাই আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি, সামনের নির্বাচনে বাঁকা পথে কোন দলই বৈতরনী পার হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেনা । আর দেশপ্রেমবোধ সম্পন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই এটি হতে দেবেন বলে মনে হয়না । তাই সাময়িক একটি অনাকাংখিত কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অবশেষে সকল দলই একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে বাধ্য হবে এবং সকল দলের অংশগ্রহনে একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক নতুন ইতিহাস রচনা হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস ।
সুতরাং এমন একটি পরিস্থিতিই হতে পারে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের একমাত্র ফলপ্রসূ উপায়।এ সময়ই হতে পারে আন্দোলন সংগ্রাম আর দরকষাকষির মাধ্যমে দাবি আদায়ের একমাত্র উপযুক্ত সময়।একদিকে, এ সময়ে বিরোধী দলগুলোর নিকট থেকে ক্ষমতায় আসার পরপরই বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করনের একটা চুড়ান্ত প্রতিশ্রুতি আদায় করা হবে অত্যন্ত সহজ একটি কাজ । অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের নিকট থেকে সহজেই জাতীয়করনের ঘোষনা আদায় করা যাবে যদি আন্দোলন সঠিক পথে চলে ।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতিকে নিরুপায় হয়ে মেনে নিলেও ক্ষমতাসীনদের নিকট থেকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ‘শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন করা হবে’ এমন মুলা ঝুলানো প্রস্তাবকে শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে বলে মনে হয়না । তাই নানা দিক থেকে দাবি আদায়ের এটাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সময় ।
তবে যত সহজে দাবি আদায়ের বিষয়টি লেখা হলো তত সহজে দাবি আদায় হবে এমনটা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র ।এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হতে পারে বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতৃত্ব ।
প্রথমত, নেতৃত্বের অগ্রভাগে যাঁরা থাকেন তাঁরা সাধারনত রুই কাতল শ্রেণির ।তাঁরা যেসব পদে বা প্রতিষ্ঠানে থাকেন সেখান থেকে বৈধভাবেও যা আয় করতে পারেন তা জাতীয়করণের প্রাপ্তির চেয়েও কয়েকগুন বেশি । সুতরাং তাঁদের মাধ্যমে জাতীয়করণের দাবি আদায় হবে এটা যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা মূলতঃ বোকার স্বর্গেই বসবাস করেন ।
দ্বিতীয়ত, যাঁরা মূলতঃ সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো করে চলার এবং বিভিন্ন সুবিধা গ্রহনের জন্য নেতৃত্বে থাকেন তাঁদের নগদ প্রাপ্ত সুবিধা যদি জাতীয়করণের সুবিধার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাঁরা জাতীয়করণের আন্দোলন সফল করে কেন বোকামী করবেন ?
তৃতীয়ত, অবসরে চলে যাওয়ার পর জাতীয়করণ হলে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির কী লাভ? যাঁরা অবসরে যাওয়ার পরও নেতৃত্ব আঁকড়ে ধরে আছেন তাঁরা অন্যের চাকুরি জাতীয়করণের জন্য মনেপ্রাণে কাজ করবেন এ আশা করাটা কী বাতুলতা মাত্র নয় ?
তাই দূর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী লিঁয়াজোবাজ, অকারনে সরকার বিরোধী ধান্ধাবাজ, লোভী, অবসরপ্রাপ্ত, প্রতিষ্ঠান থেকে বড় ধরনের সুবিধাভোগী এমন ধরনের নেতৃত্বকে বাদ দিতে হবে । সাধারন মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পারফরম্যান্স দেখে ত্যাগী ও যোগ্যদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে । বায়ুবীয় কর্মসূচী বাদ দিয়ে গঠনমূলক ও দৃশ্যমান কর্মসূচী নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে ২০১৮ সালেই জাতীয়করণের দাবি আদায় অবশ্যই সাফল্যের মুখ দেখবে ।
সর্বশেষ সমস্যাটার কথাতো বলা হলোনা ।বাজেট নেই, টাকা নেই এ অযুহাতে শেষমেষ জাতীয়করণের আন্দোলন হিম শীতল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । তাহলে সমাধান কী ? জাতীয়করণ করতে যে পরিমান অর্থ খরচ হবে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি অর্থ নাকি শিক্ষা খাতে দূর্নীতি হয় ।
উত্তর একটাই, একেবারেই সরল অংক-দূর্নীতি কমলেই জাতীয়করণ সম্ভব । তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়তো সরকারি কোষাগারে যাবেই ।তাই এখন শুধু প্রয়োজন মেরুদন্ড সোজা রেখে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী প্রদান করা এবং কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সহযোগী ভূমিকা পালন করবেন মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার আদায় করা ।

=== লেখকঃ এ এস এম কামাল উদ্দিন, সহকারি অধ্যাপক === 

Tuesday, November 21, 2017

Facebook এ Like অপশন‌টি অত্যন্ত সহজ কিন্ত বিপজ্জনকও।

Facebook Like অপশনটি অত্যন্ত সহজ কিন্ত বিপজ্জনকও

Facebook এ লগইন করা মাত্রই এর টাইমলাইনে প্রথম যেটা দেখা যায় সেটা হলো What’s on your mind? যার সাধারন অর্থ হলো - কী ভাবছ ? অর্থাৎ এখানে একজন  Facebook ব্যবহারকারী তার নিজস্ব ভাবনা প্রকাশ করতে পারে । সাধারনত লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করা যায় ।এ ধরনের প্রকাশকে পোস্ট (Post) বা স্টাটাস (Status) ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে ।

Post দ্বারা কোন কিছু প্রেরণ করা বা ছাড়া বা পাঠানো ইত্যাদি বুঝায় ।আর  Satus দ্বারা অবস্থা, সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি বুঝানো হয়ে থাকে ।

Facebook এর এ Status খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় । কারও Marital Status দ্বারা তার বৈবাহিক অবস্থা বুঝা যায় । অর্থাৎ এটা দ্বারা তিনি বিবাহিত, নাকি অবিবাহিত তা জানা বা বুঝা যায় ।তাই Status শব্দটি  ব্যবহার করে আমরা কারও কোন বিষয়ে অবস্থা জানার চেষ্টা করি ।যেমন আমরা কারও সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি- তাঁর স্যোসাল স্ট্যাটাস কী ? পলিটিক্যাল স্ট্যাটাস কী ? জব স্ট্যাটাস কী ? বিজনেস স্ট্যাটাস কী ? ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কী ? ইত্যাদি ইত্যাদি ।

Facebook এর এ Status বা Post খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয় । এটা দ্বারা আমাদের ব্যক্তিত্বের অবস্থা, চিন্তা বা ভাবনার অবস্থা, রুচি বা পছন্দের অবস্থা, শিক্ষাদীক্ষা বা জ্ঞানের অবস্থা, কর্মের অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ পায় ।অর্থাৎ Facebook Post বা Status ও প্রমাণ করে আমরা কে কেমন মানুষ বা আমাদের কার কী অবস্থা? তাই কিছু Post করার বা Status দেয়ার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এটা দিয়েই মানুষ আমাদের ব্যক্তিত্ব, চিন্তা, রুচি, শিক্ষা,কর্ম ইত্যাদির বিচার করবে ।

Facebook এর এ Status বা Post সম্পর্কে অন্যদের অনুভুতি প্রকাশের জন্য রয়েছে Like, Love, Haha, Wow, Sad, Angry ইত্যাদি Option । আর মত প্রকাশের জন্য রয়েছে Comment Option এবং প্রচার করার জন্য রয়েছে Share Option.

এসব Option এর মধ্যে Like, Comment ও Share বেশি ব্যবহৃত হয় । এর মধ্যে Like সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কারন সদ্যজাত শিশু থেকে মুমূর্ষু বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এটি ব্যবহার করতে পারে কোন শিক্ষা-প্রশিক্ষন ছাড়াই ।

অভিধানে Like শব্দটির বহু অর্থ থাকলেও Facebook এ Like শব্দটির অর্থ পছন্দ করা বা ভাল লাগা বা  সমর্থন করাকেই বুঝায় ।তাই যারা বুঝেন তারা কারও Status বা Post কে ভাল লাগলে বা পছন্দ হলে অথবা সমর্থন করলেই Like দিয়ে থাকেন, ভালবাসা প্রকাশ করতে Love দিয়ে থাকেন, মজা বা খুশি প্রকাশ করতে Haha দিয়ে থাকেন, অতি ভাল লাগা প্রকাশ করতে Wow দিয়ে থাকেন, দুঃখ প্রকাশ করতে Sad দিয়ে থাকেন এবং রাগ বা বিরক্তি বা ক্ষুব্ধ ভাব প্রকাশ করতে Angry দিয়ে থাকেন। কিন্ত শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে বুঝে না বুঝে অধিকাংশ মানুষই সোজা সাপ্টা Like দিতেই বেশি পছন্দ করে ।

Facebook এ Like শব্দটির অর্থ পছন্দ করা বা ভাল লাগা বা সমর্থন করাকেই বুঝায় ।কারও মৃত্যু সংবাদ শুনলে আমরা কখনও বলিনা যে, এ মৃত্যু সংবাদে খুশি হয়েছি বা এ মৃত্যু সংবাদটি ভাল লেগেছে অথবা এ ধরনের মুত্যুকে সমর্থন করি ।কিন্ত Facebook এ মৃত্যু সংবাদের Post এ Like দিয়ে আমরা সেটাই করছি ।আবার মৃত্যু সংবাদের Post/Status দাতাও বেশি বেশি Like পেয়ে খুশি হচ্ছে ব্যাপারটা না বুঝেই ।অথচ এ ধরনের পোস্ট’র জন্য শুধু Sad, Comment ও Share ই প্রযোজ্য যা আমরা অনেকেই চিন্তা করিনা ।

ফেসবুকের ব্যবহার যেভাবে শুরু হয়েছিল এখন আর সেভাবে নেই ।এটা ব্যবহারে বৈচিত্রতা এসেছে অনেক ।তবে এটা সত্য যে, ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই বেশি হচ্ছে । মানুষের পার্সোনাল ইমোশনগুলো আর পার্সোনাল পর্যায়ে থাকছে না ।সেল্ফি ম্যানিয়া ও Live ম্যানিয়া এটার বড় উদাহরন ।

আজকাল নামাজরত অবস্থায় সেল্ফি, হজ্জ্বে গিয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় সেল্ফি, দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় সেল্ফি, মরদেহকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত সেল্ফি, জবাইকৃত কোরবানীর পশুর দেহের উপর বসে সেল্ফি, কবর জিয়ারতের সেল্ফি, জানাযার সেল্ফি, পুকুরে গোসলের সেল্ফি, পাবলিক টয়লেটের সামনে অপেক্ষার সেল্ফি, কুকুরের সাথে সেল্ফি ইত্যাদি হাজার লাখো রকমের সেল্ফি আমাদের চিন্তার জগতে এক মহা বাতিক রুপে দেখা দিয়েছে ।তেমনি যখন তখন, যে কেউ, কারনে অকারনে Live এ এসে নিজেকে যেভাবে উপস্থাপন করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলি কুরুচির বহিঃপ্রকাশ কিন্ত তবুও হাজার হাজার মানুষ দেখছে, Like দিচ্ছে, যা তা Comment করছে, Live এ থেকেই Comment এর যা তা উত্তরও দিচ্ছে । এসব বিষয় আমাদের সমাজকে, প্রজন্মকে এক অনিরাময়যোগ্য অপসংস্কৃতি রোগে সংক্রামক আকারে আক্রান্ত করছে ।

এ থেকে বর্তমানে মুক্তি পাওয়া একরকম অসম্ভব ব্যাপার ।ভাল থাকার বা নিজেকে ভাল রাখার একান্ত ইচ্ছাই শুধু এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় হতে পারে । তবে সহজলভ্য প্রযুক্তির এ যুগে গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে মুক্ত থাকাও খুব কঠিন কাজ ।তাই প্রযুক্তির এ অপব্যবহারের ফলে অদূর ভবিষ্যতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা মহান সৃষ্টিকর্তাই ভাল জানেন ।

তবুও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে । বায়ুর চাইতেও সহজলভ্য প্রযুক্তির এ যুগে প্রযুক্তি থেকে দুরে সরে থাকা যেমন বোকামী তেমন অসম্ভবও বটে ।একটি এন্ড্রয়েড বা স্মার্ট ফোন থাকবেনা, একটি Facebook আইডি থাকবেনা, একটি ওয়েবসাইট থাকবেনা, একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকবেনা, শিক্ষকের গুগল ক্লাসরুম থাকবেনা এটা কী করে হয় ? শুধু কী এসব থাকবে ? twitter থাকবে, Linkedin থাকবে, Whatsapp থাকবে, pinterest থাকবে, Instagram থাকবে, শিক্ষক বাতায়ন, কিশোর বাতায়ন এগুলো সবই থাকবে কিন্ত ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।তবে Like এর ব্যাপারে বেশি সাবধান থাকতে হবে ।  

Facebook Like অপশনটি অত্যন্ত সহজ কিন্ত বিপজ্জনকছোট স্ক্রীনের এন্ড্রয়েড বা স্মার্ট ফোনে Facebook ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটাতো  আরও মহাবিপজ্জনক

Facebook Comments কনফার্ম করার জন্য Enter এবং Share কনফার্ম করার জন্য Post ক্লিক করার ব্যবস্থা থাকলেও Like এর জন্য এমন ব্যবস্থা নেই ছোট স্ক্রীনের স্মার্ট ফোনে Facebook চালানোর সময় টার্চ এর কারনে চোখ নের অজান্তেইকোন কিছু নিচ্ছাকৃত লাইক য়ে যায় কখনও কখনও এসব লাইক নিজের জন্য এমনকি ন্যের জন্যও বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি রে

আমার তে Like কনফার্ম করার জন্যও Enter বা Post এর মত কিছু একটা ব্যবস্থা থাকলে বিপদ কিছুটা কম হতো। কিন্ত এ ব্যবস্থাতো করতে হবে Facebook কর্তৃপক্ষকে । আশায় থাকলাম হয়তো অচিরেই তাদের চিন্তায় এ বিষয়টি আসতেও পারে। 





Featured post

অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী স্মরণে।

অধ্যক্ষ এম এ বারী ছবিটি স্যারের জৈষ্ঠ পুত্র জনাব সাজ্জাদুল বারী ’র নিকট থেকে সংগৃহীত।  আমার প্রথম বস অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী। আজ থেকে ঊনত্রিশ...