শিক্ষা জাতীয়করণ: ২০১৮ সাল দাবি আদায়ের শ্রেষ্ঠ সময়

শিক্ষা জাতীয়করণ প্রসঙ্গ।।

জাতীয়করণের আন্দোলন শুধু ফেসবুকে সীমাবদ্ধ থাকলে জাতীয়করণ শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে । ফেসবুকের সঙ্গে বাস্তব ও দৃশ্যমান কর্মসূচী থাকতে হবে । পেশাজীবি সংগঠনগুলোর মধ্যে সকল সময়ই সরকার সমর্থিত এক বা একাধিক সংগঠন গড়ে ওঠে । এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মুখে দাবী আদায়ের স্লোগান থাকলেও মূল উদ্দেশ্য থাকে নেতা হওয়া এবং সরকার থেকে নানা ধরনের সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে দাবী আদায়ের আসল আন্দোলনকে বিনষ্ট করা । তাই আসল নকল চিনে পথ চলতে হবে ।এবার নকলদের পাতানো ফাঁদে পাঁ দিলে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের সারাজীবন হায় হায় করতে হবে ।
বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করনের দাবী আদায়ের জন্য বেসরকারি শিক্ষকদের জীবনে ২০১৮ সালই সর্বদিক থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত ও একমাত্র সেরা সময় । সময়ের ফোঁড় সময়ে না দিলে জাতীয়করণ হবে সোনার হরিণ । যদিও কিছু কিছু কর্মসূচীর কথা অনলাইন পত্রিকা দৈনিক শিক্ষা এবং কিছু ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ থেকে জানা যাচ্ছে । কিন্ত এসব কর্মসূচী সম্পর্কে সাধারন শিক্ষকদের মনে নানা রকমের সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে । বিগত ২/১ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে কিছু শিক্ষক সংগঠন জানুয়ারীতে পালন হবে এমন কিছু কঠিন কর্মসূচী নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ঘোষনা করে থাকে । কিন্ত জানুয়ারী মাস যতই ঘনিয়ে আসে কর্মসূচী দাতাদের কঠিন কর্মসূচী ততই কোমল হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে অজ্ঞাত কারনে এসব কর্মসূচী হিমাগারে চলে যায় ।
২০১৮ এর শেষে অথবা ২০১৯ এর প্রথমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ।নানাদিক থেকে এ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্য সকল নির্বাচনের চেয়ে যে তাৎপর্যপূর্ন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।এ নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার পূনরায় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হওয়া যেমন কঠিন হবে, তেমনি প্রায় এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর জন্য ক্ষমতা ফিরে পাওয়া আরও কঠিন হবে ।আগামী নির্বাচনের উপরই নির্ভর করছে পরবর্তী বাংলাদেশের কাঙ্খিত বা অনাকাঙ্খিত ভবিষ্যত । আমার বিশ্বাস ষোল কোটি মানুষের এ দেশে দেশপ্রেমবোধ সম্পন্ন ক্ষমতাধর মানুষের অভাব নেই ।তাই আমি দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি, সামনের নির্বাচনে বাঁকা পথে কোন দলই বৈতরনী পার হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেনা । আর দেশপ্রেমবোধ সম্পন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থেই এটি হতে দেবেন বলে মনে হয়না । তাই সাময়িক একটি অনাকাংখিত কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অবশেষে সকল দলই একটি যৌক্তিক সমাধানে আসতে বাধ্য হবে এবং সকল দলের অংশগ্রহনে একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক নতুন ইতিহাস রচনা হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস ।
সুতরাং এমন একটি পরিস্থিতিই হতে পারে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের একমাত্র ফলপ্রসূ উপায়।এ সময়ই হতে পারে আন্দোলন সংগ্রাম আর দরকষাকষির মাধ্যমে দাবি আদায়ের একমাত্র উপযুক্ত সময়।একদিকে, এ সময়ে বিরোধী দলগুলোর নিকট থেকে ক্ষমতায় আসার পরপরই বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করনের একটা চুড়ান্ত প্রতিশ্রুতি আদায় করা হবে অত্যন্ত সহজ একটি কাজ । অন্যদিকে বর্তমানে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের নিকট থেকে সহজেই জাতীয়করনের ঘোষনা আদায় করা যাবে যদি আন্দোলন সঠিক পথে চলে ।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে জাতীয়করণের প্রতিশ্রুতিকে নিরুপায় হয়ে মেনে নিলেও ক্ষমতাসীনদের নিকট থেকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে পারলে ‘শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করন করা হবে’ এমন মুলা ঝুলানো প্রস্তাবকে শিক্ষক সমাজ মেনে নেবে বলে মনে হয়না । তাই নানা দিক থেকে দাবি আদায়ের এটাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ সময় ।
তবে যত সহজে দাবি আদায়ের বিষয়টি লেখা হলো তত সহজে দাবি আদায় হবে এমনটা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র ।এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হতে পারে বেসরকারি শিক্ষক সংগঠনের সাংগঠনিক নেতৃত্ব ।
প্রথমত, নেতৃত্বের অগ্রভাগে যাঁরা থাকেন তাঁরা সাধারনত রুই কাতল শ্রেণির ।তাঁরা যেসব পদে বা প্রতিষ্ঠানে থাকেন সেখান থেকে বৈধভাবেও যা আয় করতে পারেন তা জাতীয়করণের প্রাপ্তির চেয়েও কয়েকগুন বেশি । সুতরাং তাঁদের মাধ্যমে জাতীয়করণের দাবি আদায় হবে এটা যাঁরা বিশ্বাস করেন তাঁরা মূলতঃ বোকার স্বর্গেই বসবাস করেন ।
দ্বিতীয়ত, যাঁরা মূলতঃ সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো করে চলার এবং বিভিন্ন সুবিধা গ্রহনের জন্য নেতৃত্বে থাকেন তাঁদের নগদ প্রাপ্ত সুবিধা যদি জাতীয়করণের সুবিধার চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাঁরা জাতীয়করণের আন্দোলন সফল করে কেন বোকামী করবেন ?
তৃতীয়ত, অবসরে চলে যাওয়ার পর জাতীয়করণ হলে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তির কী লাভ? যাঁরা অবসরে যাওয়ার পরও নেতৃত্ব আঁকড়ে ধরে আছেন তাঁরা অন্যের চাকুরি জাতীয়করণের জন্য মনেপ্রাণে কাজ করবেন এ আশা করাটা কী বাতুলতা মাত্র নয় ?
তাই দূর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী লিঁয়াজোবাজ, অকারনে সরকার বিরোধী ধান্ধাবাজ, লোভী, অবসরপ্রাপ্ত, প্রতিষ্ঠান থেকে বড় ধরনের সুবিধাভোগী এমন ধরনের নেতৃত্বকে বাদ দিতে হবে । সাধারন মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পারফরম্যান্স দেখে ত্যাগী ও যোগ্যদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে । বায়ুবীয় কর্মসূচী বাদ দিয়ে গঠনমূলক ও দৃশ্যমান কর্মসূচী নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে ২০১৮ সালেই জাতীয়করণের দাবি আদায় অবশ্যই সাফল্যের মুখ দেখবে ।
সর্বশেষ সমস্যাটার কথাতো বলা হলোনা ।বাজেট নেই, টাকা নেই এ অযুহাতে শেষমেষ জাতীয়করণের আন্দোলন হিম শীতল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । তাহলে সমাধান কী ? জাতীয়করণ করতে যে পরিমান অর্থ খরচ হবে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি অর্থ নাকি শিক্ষা খাতে দূর্নীতি হয় ।
উত্তর একটাই, একেবারেই সরল অংক-দূর্নীতি কমলেই জাতীয়করণ সম্ভব । তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়তো সরকারি কোষাগারে যাবেই ।তাই এখন শুধু প্রয়োজন মেরুদন্ড সোজা রেখে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী প্রদান করা এবং কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ সহযোগী ভূমিকা পালন করবেন মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার আদায় করা ।

=== লেখকঃ এ এস এম কামাল উদ্দিন, সহকারি অধ্যাপক === 

Popular posts from this blog

সরি (Sorry) এর ব্যবহার ও অপব্যবহার

রোহিঙ্গা বনাম নন এমপিও শিক্ষক || প্রসঙ্গ : মানবতা ||