''শিক্ষা কোন পণ্য নয়, বেচা - কেনার জন্যও নয় ।।

শিক্ষা কোন পণ্য নয়, বেচা - কেনার জন্যও নয় ।।

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে তীরস্কারের মাধ্যমে আবিস্কার করে, নিজের অজ্ঞতাকে বিজ্ঞতায় পরিনত করে, নিজের পাশবিক প্রবৃত্তিকে মানবিক প্রবৃত্তিতে রুপদান করে, নিজের অন্তর্নিহিত পশুত্বকে মনুষ্যত্বে রুপান্তর করে, নিজের লোভকে সংবরন করার ক্ষমতা অর্জন করে, নিজের দৃষ্টিভঙ্গীকে শাসন করার দক্ষতা অর্জন করে, নিজের চরিত্রের কালো দাগগুলি আলো দ্বারা ধৌত করে, নিজের সার্বিক আচরনের ইতিবাচক স্থায়ী উন্নয়ন-বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় তাকে শিক্ষা বলে।
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্ম থেকে পরিবার, সমাজ, পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক ,আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন করে।
পরিবার, সমাজ, প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত শেখে ও শেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মানুষকে শিখতে হয়।মানুষ কখনও জ্ঞাতে শিখে, কখনওবা নিজের অজ্ঞাতেই শেখে । এধরনের অনির্দিষ্ট উপায়ে মানুষের শেখার পদ্ধতিই হলো অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা।
আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে একটি নির্দিষ্ট বয়সে স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধারাবাহিক এবং পাঠ্যক্রম অনুসারে সম্পাদন করা শিক্ষার বিপরীতে সার্টিফিকেট অর্জন করা শিক্ষাকে বোঝানো হয়।
অন্যদিকে, সাধারণত বিশেষ কোন জনগোষ্টির শিখন চাহিদা মেটানোর জন্য, সাধারন শিক্ষা পদ্ধতির বাইরে পরিচালিত শিক্ষামূলক কার্যক্রমই হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের জন্য বয়স, দিনক্ষণ, সিলেবাস, শিক্ষা উপকরন, অর্থ ইত্যাদি প্রয়োজন না হলেও আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য এসব বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ন।কিন্ত এ আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পড়ালেখা করে জ্ঞান আহরনের জন্য একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময়, সহনীয় পাঠ্যক্রম, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য শিক্ষা উপকরন।
কিন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আমাদের দেশে বর্তমানে সার্টিফিকেট অর্জন সহজসাধ্য হলেও শিক্ষা উপকরন মোটেও সহজলভ্য নয়।পাঠ্যক্রমের বিশাল বহর, নোট বই, গাইড বই, কোচিং, প্রাইভেট ইত্যাদির চাপে একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করার মত পড়া লেখা করতে পারার সে সময় সত্যিই বড় অভাব।যে কারনে নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে থেকে ভাসা ভাসা দুর্বল ও সীমিত জ্ঞান অর্জনের ফলে তার পড়ার বাইরে অথচ সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন অন্য কোন বা নতুন কোন সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারছেনা। যে কারনে এখনকার শিক্ষার্থীরা GPA 5 বা A+ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারছেনা।
শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে এখনই ভেবে দেখার প্রকৃত সময় যে, আমাদের সন্তানরা সত্যিই জ্ঞান অর্জন করছে, নাকি সার্টিফিকেটধারী উচ্চ শিক্ষিত মাছি মারা কেরাণী তৈরি হচ্ছে ?

লেখকঃ  এ এস এম কামাল উদ্দিন

Popular posts from this blog

সরি (Sorry) এর ব্যবহার ও অপব্যবহার

রোহিঙ্গা বনাম নন এমপিও শিক্ষক || প্রসঙ্গ : মানবতা ||