Tuesday, October 24, 2017

''শিক্ষা কোন পণ্য নয়, বেচা - কেনার জন্যও নয় ।।

শিক্ষা কোন পণ্য নয়, বেচা - কেনার জন্যও নয় ।।

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে তীরস্কারের মাধ্যমে আবিস্কার করে, নিজের অজ্ঞতাকে বিজ্ঞতায় পরিনত করে, নিজের পাশবিক প্রবৃত্তিকে মানবিক প্রবৃত্তিতে রুপদান করে, নিজের অন্তর্নিহিত পশুত্বকে মনুষ্যত্বে রুপান্তর করে, নিজের লোভকে সংবরন করার ক্ষমতা অর্জন করে, নিজের দৃষ্টিভঙ্গীকে শাসন করার দক্ষতা অর্জন করে, নিজের চরিত্রের কালো দাগগুলি আলো দ্বারা ধৌত করে, নিজের সার্বিক আচরনের ইতিবাচক স্থায়ী উন্নয়ন-বিকাশ ও পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় তাকে শিক্ষা বলে।
শিক্ষা একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। মানুষ জন্ম থেকে পরিবার, সমাজ, পরিবেশ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিক ,আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন করে।
পরিবার, সমাজ, প্রকৃতি ইত্যাদি থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত শেখে ও শেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় মানুষকে শিখতে হয়।মানুষ কখনও জ্ঞাতে শিখে, কখনওবা নিজের অজ্ঞাতেই শেখে । এধরনের অনির্দিষ্ট উপায়ে মানুষের শেখার পদ্ধতিই হলো অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা।
আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে একটি নির্দিষ্ট বয়সে স্কুল, কলেজ, মাদ্রসা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধারাবাহিক এবং পাঠ্যক্রম অনুসারে সম্পাদন করা শিক্ষার বিপরীতে সার্টিফিকেট অর্জন করা শিক্ষাকে বোঝানো হয়।
অন্যদিকে, সাধারণত বিশেষ কোন জনগোষ্টির শিখন চাহিদা মেটানোর জন্য, সাধারন শিক্ষা পদ্ধতির বাইরে পরিচালিত শিক্ষামূলক কার্যক্রমই হচ্ছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা।
অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহনের জন্য বয়স, দিনক্ষণ, সিলেবাস, শিক্ষা উপকরন, অর্থ ইত্যাদি প্রয়োজন না হলেও আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য এসব বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ন।কিন্ত এ আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পড়ালেখা করে জ্ঞান আহরনের জন্য একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজন পর্যাপ্ত সময়, সহনীয় পাঠ্যক্রম, সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য শিক্ষা উপকরন।
কিন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে আমাদের দেশে বর্তমানে সার্টিফিকেট অর্জন সহজসাধ্য হলেও শিক্ষা উপকরন মোটেও সহজলভ্য নয়।পাঠ্যক্রমের বিশাল বহর, নোট বই, গাইড বই, কোচিং, প্রাইভেট ইত্যাদির চাপে একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করার মত পড়া লেখা করতে পারার সে সময় সত্যিই বড় অভাব।যে কারনে নির্দিষ্ট গন্ডীর মধ্যে থেকে ভাসা ভাসা দুর্বল ও সীমিত জ্ঞান অর্জনের ফলে তার পড়ার বাইরে অথচ সিলেবাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন অন্য কোন বা নতুন কোন সমস্যা সমাধান করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারছেনা। যে কারনে এখনকার শিক্ষার্থীরা GPA 5 বা A+ পেয়েও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোতে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারছেনা।
শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে এখনই ভেবে দেখার প্রকৃত সময় যে, আমাদের সন্তানরা সত্যিই জ্ঞান অর্জন করছে, নাকি সার্টিফিকেটধারী উচ্চ শিক্ষিত মাছি মারা কেরাণী তৈরি হচ্ছে ?

লেখকঃ  এ এস এম কামাল উদ্দিন

Friday, October 20, 2017

‘ মেসার্স ’ শব্দের ভুল প্রয়োগ ।


মেসার্স মাডিপার্ট মেন্টাল স্টোর-
মেসার্স শব্দের ভুল প্রয়োগ ।।
নিশ্চয়ই শিরোনাম পড়তে হোঁচট খেয়েছেন । আপনার মত আমিও খেয়েছি । কিন্ত এটি সত্যি সত্যি একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম যা এর সাইন বোর্ড এ লেখা । যারা শিরোনামটি এতক্ষনে বুঝে ফেলেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ । আর যাঁরা বুঝতে পারেননি, আসুন বুঝার চেষ্টা করি ।
আমরা যদি কাউকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করি তিঁনি সাধারনত বলেন আমি অমুক, বা আমার নাম তমুক ইত্যাদি । কিন্ত, আমি জনাব অমুক বা আমার নাম মিস্টার তমুক এভাবে সাধারনত কেউ উত্তর দেননা ।নিজেকে নিজে জনাব বা মিস্টার বলে পরিচয় দিলে তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়না, তবে শব্দ প্রয়োগে সঠিকতার পরিচয়ও বহন করেনা ।
ইংরেজি 'মিস্টারবা(Mr) শব্দের বহুবচন শব্দটি হলো 'মেসার্স' বা (Messrs) অর্থাৎ মিস্টার দ্বারা একজন আর মেসার্স দ্বারা একাধিকজনকে বুঝায় ।এক্ষেত্রে মিস্টার দ্বারা জনাব বা সাহেব বা ভদ্র মহোদয় আর মেসার্স দ্বারা জনাবগণ বা সাহেবগণ বা ভদ্রমহোদয়গণ বুঝায় ।
'মেসার্স' শব্দটি সাধারত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় । অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ড, প্যাড ও অন্যান্য কাগজপত্রে মেসার্স শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন । কিন্তু  অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অজ্ঞতা বা  অসচেতনতার  কারনে এ শব্দটির আমরা ভুল প্রয়োগ করে থাকি ।
যেসব  ব্যবসায়  প্রতিষ্ঠানের  নাম  কোনো  মানুষের  নামে  এবং  তার  সঙ্গে  অন্য  আরো  কিছু মানুষের  সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ  করে সে ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, প্যাড ও অন্যান্য কাগজপত্রে মেসার্স শব্দটি ব্যবহার করলে এতে ভুল হলেও তেমন অন্যায় কিছু হবেনা । যেমন হেলাল এন্ড ব্রাদার্স , বেলাল এন্ড সন্স এ নামগুলোতে হেলালের সাথে তার ভাইদের এবং বেলালের সাথে তার ছেলেদের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ করে । এক্ষেত্রে হেলাল এন্ড ব্রাদার্স , বেলাল এন্ড সন্স ব্যবসায় দু’টির নামের আগে মেসার্স যুক্ত করলে সমস্যার কিছু নেই, তবে নিজেকে নিজে ভদ্রলোক ঘোষনা দেয়ার মত হয়ে যায় ।
অন্যদিকে যেসব  ব্যবসায়  প্রতিষ্ঠানের  নাম  কোনো একজন  মানুষের  নামে  অথবা মানুষ ব্যতীত অন্য নামে এবং  তার  সঙ্গে  অন্য  আর কোন মানুষের  সংশ্লিষ্টতা  প্রকাশ  করেনা সে ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, প্যাড ও অন্যান্য কাগজপত্রে মেসার্স শব্দটি ব্যবহার করলে এতে অন্যায় হবেনা কিন্ত ভুল হবে । যেমন রহিম স্টোর, করিম এন্টারপ্রাইজ, সততা স্টেশনারী ইত্যাদি ।
এ নামগুলোতে রহিম, করিম ও সততা’র সঙ্গে অন্য  আর কোন মানুষের  সংশ্লিষ্টতা  প্রকাশ  করেনা ।যেহেতু মেসার্স শব্দটির অর্থ ভদ্রমহোদয়গণ তাই এ নামগুলোর আগে মেসার্স শব্দ যুক্ত করা মোটেই সমীচিন নয় ।
তাহলে এ মেসার্স শব্দটি কে ব্যবহার করবে ? উত্তর হলো অন্যদেরকে সম্ভোধনের ক্ষেত্রে আপনি বা আপনারা আর আপনাদেরকে সম্ভোধনের ক্ষেত্রে অন্যরা এ মেসার্স শব্দটি ব্যবহার করবে । অর্থাৎ আপনি যেমন অন্যকে মিস্টার বলে সম্ভোধন করেন নিজেকে নয় । তেমনি অন্যরা আপনাকে সম্ভোধন করবে মিস্টার বলে, তাঁর নিজেকে নয় ।
তাই আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যদি ‘হেলাল এন্ড ব্রাদার্স’ , ‘বেলাল এন্ড সন্স’- এ জাতীয় হয় তবে আপনাকে সম্ভোধন করতে অন্যরা মেসার্স ব্যবহার করবে ।আর রহিম স্টোর, করিম এন্টারপ্রাইজ, সততা স্টেশনারী-এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হলে সম্ভোধনের ক্ষেত্রে মেসার্স ব্যবহার করা সম্পূর্নরুপে ভুল হবে । আর সাইনবোর্ড, প্যাড ইত্যাদিতে নিজের প্রতিষ্ঠানের নামের আগে মেসার্স শব্দটি যুক্ত করা সম্পূর্ন অপ্রয়োজনীয় এবং ভুলও বটে ।

শেষ করব শিরোনামের ব্যাখ্যা দিয়ে । দুই শাটার বিশিষ্ট একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের শাটার বক্সের মাঝখানের জায়গা লেখার অযোগ্য হওয়ায় দোকানের নামটি দু’ভাগ করে লিখতে হয়েছে । লেখার জায়গা সংকীর্ন হওয়ায় বাম পাশের অংশে লেখা হয়েছে- মেসার্স মাডিপার্ট  আর ডান পাশে লেখা হয়েছে- মেন্টাল স্টোর । আসলে হওয়ার কথা- ‘ মা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ’ । এখানে এ সংকীর্ন জায়গায়ও ‘ মেসার্স ’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে সম্পূর্ন অপ্রয়োজনে এবং না বুঝেই ।

----- এ এস এম কামাল উদ্দিন ।

Tuesday, October 17, 2017

স্মৃতিপটে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর / Ahasan Monjil Museum in Memory


স্মৃতিপটে আহসান মঞ্জিল

---সাবরিনা তাসনিম শশী ।।


গত তিন চারদিন যাবত আব্বু জিঞ্জেস করছেন আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পরিদর্শনের লেখাটি শেষ করছিনা কেন ? বললাম অনেকগুলো তথ্য মনে করতে পারছিনা তাই । আব্বু বললেন সমস্যা নেই আমি এডিট করে দেব, তুমি যা মনে আছে লিখে ফেল । তাই এ ভ্রমন কাহিনীটিও আব্বুর সহায়তায় সম্পন্ন করলাম। 

আগেরদিন শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর দেখা হলো । পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ যাওয়ার কথা আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখতে । সিদ্ধান্ত হয়েছিল সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে রওয়ানা হবো । সকাল আটটার দিকে আব্বু জানালেন এ বেলা যাওয়া হবেনা, যেতে হবে বিকেল বেলা । মনটা খারাপ হলো । কোনটাই পরিকল্পনা অনুসারে হচ্ছেনা ।আব্বুর কাছে কারন জানতে চাইলে আব্বু প্রথমেই বললেন-মনে রাখবে শহরে পরিকল্পনা মাফিক সব কিছু করা যায়না । বললেন আজ শারদীয় দুর্গা পুজার বিজয়া দশমী । এ দিনই দেবী বিসর্জন হয় । আহসান মঞ্জিলের অবস্থান পুরোনো ঢাকায় । পুরোনো ঢাকার রাস্তাগুলো অনেক সংকীর্ন । প্রায় সারাক্ষনই যানযট লেগে থাকে ।পুরোনো ঢাকায় অধিকাংশ হিন্দু পরিবার বসবাস করায় এখানে পুজা মন্ডপ বেশি । এ এলাকার সব দেবী মুর্তি বিসর্জন হয় বুড়িগঙ্গায় । আর আহসান মঞ্জিলের অবস্থানও পুরোনো ঢাকায় বুড়িগঙ্গার তীরে ।আব্বুর ধারনা ছিল সকাল বেলা এসব কারনে ভয়াবহ যানযট থাকবে তাই বিকেল বেলা যাওয়ার সিদ্ধান্ত ।
কী আর করা এটা ওটা করে সময় অতিক্রম করার চেষ্টা । আব্বুর কাছে জানতে চাইলাম আহসান মঞ্জিল যাওয়ার পথে দেখার মত আর কোন ঐতিহাসিক কিছু আছে কিনা ? আব্বু জানালেন আছে যেমন- জর্জ কোর্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাহাদুরশাহ পার্ক । আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম বাহাদুরশাহ পার্ক কি রমনা পার্কের মত ? আব্বু হেঁসে উত্তর দিলেন- তোমার নানু বাড়ির উঠানের চাইতে কিছুটা বড় হতে পারে ।কথাটা শুনে মজা পেলাম কিন্ত আশ্চর্য হলাম ।তাহলে এটা এত বিখ্যাত কেন ? আব্বু বললেন এটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে ।প্রথমে এটার নাম ছিল ভিক্টোরিয়া পার্ক । ভিক্টোরিয়া ছিলেন ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাণী যিঁনি মহরাণী ভিক্টোরিয়া হিসেবে পরিচিত ।পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ’র নামানুসারে ভিক্টোরিয়া পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক ।পার্কটির অবস্থান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের কাছাকাছি ।
বিকেল তিনটায় রওয়ানা হলাম । আগের দিনের মতই রওয়ানার পূর্বে আব্বু বলে দিলেন-ভ্রমনটা ভালোভাবে উপভোগ করতে । অবশ্যই এ ভ্রমন নিয়েও একটা ট্রাভেল স্টোরি লিখতে হবে । আব্বু বরাবরের মতই আমাদেরকে এটা ওটা চিনাতে চেষ্টা করলেন ।বললেন একদিন পড়ার সময় তুমি আমাকে শহীদ নূর হোসেন চত্বর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেনা ? সামনের এটাই নূর হোসেন চত্বর ।পশ্চিম পাশের বিশাল ভবনটি হলো সচিবালয়, আর পূর্ব পাশেরটা দেশের প্রধান পোস্ট অফিস জিপিও । জিপিওর পূর্বপাশে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম আর তার পূর্বপাশে জাতীয় স্টেডিয়াম । আরও আরও কত কি চিনানোর চেষ্টা করেছেন তবে এত অল্প সময়ে এত কিছু মনে রাখা কঠিন ।

ধীরে ধীরে সমনে এগিয়ে চলছি । আব্বু বললেন সামনে যানযটের আলামত ।দু’ঘন্টায়ও পৌঁছতে পারব কিনা সন্দেহ ।আবারও মন খারাপ হলো । আম্মু, আব্বু আর আমরা তিন বোন যাচ্ছি ।আব্বু বললেন বিরক্ত বোধ করিওনা । ঢাকা সিটিতে বাস করতে হলে এগুলিকে স্বাভাবিক ভেবে মেনে নিতে হবে । তবে যানযটের মধ্যে পড়লে ব্যাগ, মোবাইল, অলংকার ইত্যাদির প্রতি সতর্ক থাকতে হয়, কারন এসব জায়গায় ছিনতাইকারীরা এগুলি টান মেরে দৌড়ে পালাতে পারে । আমাদের বিরক্তির ভাব কাটাতে আব্বু অন্য প্রসঙ্গ তুললেন ।

প্রায় এক ঘন্টার যানযট অতিক্রম করে আব্বুই দেখালেন ডানদিকে জর্জকোর্ট, সামনে একটু বাঁদিকে বাহাদুরশাহ পার্ক, তার একটু সামনে ডানদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় । তারপর আরও কিছু যানযট অতিক্রম করে কাংখিত ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলে পৌঁছলাম । গেটেই টিকেট কাউন্টার । বড়দের টিকেটের মূল্য মাথাপিছু ২০ টাকা আর  শিশুদের টিকেটের মূল্য ১০ টাকা । আব্বু টিকেট কিনতে কাউন্টারে গেলেন ।আমরা যেখানে দাঁড়ালাম সেখান থেকেই কাউন্টারের গায়ে লেখা নির্দেশনা গুলো পড়ে জানলাম আহসান মঞ্জিল  খোলা থাকে শনি- বুধ সকাল ১০.৩০ টা  থেকে বিকেল ৫.৩০ টা পর্যন্ত । আর শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি সব ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর এরিয়াতে প্রবেশ করলাম । সুর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে তাই আলো থাকতে থাকতে ছবি তোলার কাজ শেষ করলাম আব্বুর কথামত ।প্রধান গেট দিয়ে ঢুকেই কারুকাজ খোঁচিত সুন্দর ছোট একটি দালান । আব্বু বললেন গ্রামের বাড়িতে ঢুকতে যেরকম কাচারী ঘর থাকে এটা তেমনি নবাব বাড়ির কাচারী ঘর । নবাবদের কাছে আসা বহিরাগতদের প্রথমে এখানেই অপেক্ষা করতে হতো ।দক্ষিনমুখী কারুকার্য খোচিত গোলাফী রঙয়ের বিশাল বিশাল দুটি দালান, সামনে বিশাল আঙ্গিনা । দোতলা থেকে আঙ্গিনায় আসার জন্য বিশাল সিঁড়ি । আঙ্গিনার শেষ প্রান্তেই বুড়িগঙ্গা নদী । আব্বু বললেন বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য আর আগের মত নেই ।তবে নবাব বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সে সময়ের বুড়িগঙ্গার প্রকৃত সৌন্দর্য কল্পনায় অনেকটাই উপভোগ করা যায় ।


ভিতরে ঢুকে একে একে সবকিছুই দেখা হলো । ভেতরে রয়েছে বিশাল বিশাল কক্ষ । রয়েছে আসবাবপত্রে সজ্জিত বিশাল ড্রইংরুম যেখানে প্রায় পঞ্চাশ জনেরও বেশি লোক একসাথে বসতে পারবে । রয়েছে ক্রোকারিজ সামগ্রী দিয়ে সাজানো বিশাল ডাইনিংরুম যেখানে প্রায় পঞ্চাশ জনেরও বেশি লোক একসাথে খেতে পারবে ।আসবাবপত্রে সজ্জিত বড় বড় অনেকগুলো বেডরুম, বই ও চেয়ার টেবিল সমৃদ্ধ রিডিংরুম, মিউজিক্যাল সরঞ্জামে সজ্জিত নাচ-গানের রুম। মূল্যবান জিনিষপত্র সংরক্ষনের লোহার তৈরি আলমারি ও অন্যান্য লকার সমৃদ্ধ কক্ষ ইত্যাদি ছাড়াও নবাবদের ব্যবহৃত জিনিষপত্রগুলো সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে । সব কিছুতেই রয়েছে একটা আভিজাত্যের ছাপ, একটা নবাবী ভাবসাব । দেখতে দেখতে মন ভরে গেছে, কষ্ট করে আসাটা স্বার্থক হয়েছে । আব্বু বললেন এবার যেতে হবে । পুরোনো ঢাকা জ্যামে পড়লে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হবে । তাই ইচ্ছা না থাকলেও বিদায় নেয়ার পালা । একবার পিছনে তাকিয়ে ভালভাবে নবাব বাড়ির রুপটি উপভোগ করে নিলাম ।মনে মনে বললাম সত্যিই অপরুপ তুমি নবাব বাড়ি । আবার আসতে পারি আর না পারি তুমি স্মৃতিপটে রইবে আজীবন । বিদায় আহসান মঞ্জিল, গুড বাই নবাব বাড়ি ।   

Saturday, October 14, 2017

দেখা হলো জাদুঘর

দেখা হলো জাদুঘর                                                         --সাবরিনা তাসনিম শশী ।।

পরের দিনের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করেই ঘুমাতে গেলাম ।কিন্ত অত তাড়াতাড়ি ঘুম কি আসে ? কালকের পরিকল্পনা না হয় চুড়ান্ত হলো কিন্ত ঢাকায় থাকা হতে পারে আরও দু’দিন ।গতকালই আব্বু সহ আমাদের ঢাকার বাসায় আসলাম দুর্গা পুজার ছুটিটা সবাই এক সঙ্গে কাটাবো বলে । ঐশি ও গত তিন মাসে তেমন কোথাও যেতে পারেনি কলেজ খোলা থাকার কারনে ।ও ঐশি হলো আমার বড় বোন । ভিকারুন্নিসা নুন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ।ছোট বেলা থেকে আমরা একে অপরকে নাম ধরে ডাকি ।পরে অবশ্য ঐশিকে আপু ডাকার প্রাকটিস করেছি কয়েকদিন কিন্ত ঐশিই না করল, না শুনতে শুনতে আপু শব্দটা কেমন যেন দূর দূর মনে হয়, বলল আগের মত নাম ধরে ডাকতে । নাম ধরে ডাকাটাই যেন মধুর বন্ধত্বের । থাকগে ওসব কথা, পরের দু’দিনের কথা আগামীদিন চিন্তা করা যাবে ।আর আমরা চিন্তা করেই বা কি লাভ ? আমরাতো এখনও ঢাকার তেমন কিছুই চিনিনা ? আব্বুর পরিকল্পনা মোতাবেক পরেরদিন শুক্রবার সকাল বেলা আহসান মঞ্জিল জাদুঘর আর বিকেল বেলা জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শনের কথা ।আপাতত এটুকু পরিকল্পনা নিয়ে পরের দু’দিনের পরিকল্পনার চিন্তা আব্বুর ঘাঁড়ে চেপে দিয়ে নিদ্রা দেবীর কোলে ঢলে পড়লাম ।

ঘুম ভাঙলো অন্য দিনের চাইতে কিছু আগেই ।কিন্ত ভোর যেন হয়না, অন্ধকার যেন কাটেনা । সূর্য মামা যে রাগ করেছে তা আর বুঝতে বাকী রইলনা ঘড়ি দেখার পর । আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি খুব বিষন্ন ভারী হয়ে আছে । মেঘ দেখে মনে হলো এ বরষার শেষ কাঁদাটাই বোধহয় কাঁদবে ।পরিবেশের সঙ্গে আমাদের মনটাও আরও বিষন্ন হলো-ভারী হলো । সারাটা দিন মাটি হবে এই ভেবে মনে মনে রাগ হলাম । কিন্ত প্রকৃতির প্রতি রাগ করা যে অনর্থক, তাই নিয়তিকেই মেনে নিলাম । বেলা প্রায় ১০ টা, সময় যেন কাটেনা । আব্বু সান্তনা দিয়ে বললেন- মন খারাপ করোনা ।এ সময়ের বৃষ্টি বেশিক্ষন স্থায়ী হয়না ।আশাকরি দুপুরের পর আকাশ ভাল হয়ে যাবে । আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আজ যাব জাতীয় জাদুঘর আর কাল যাব আহসান মঞ্জিল জাদুঘর ।

আকাশের অবস্থা ধীরে ধীরে ভাল হতে লাগল ।পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেল ৩ টায় রওয়ানা হলাম । ‍শুরুতেই আব্বু বলে দিলেন –জার্নিটা ভালভাবে মনে রাখার চেষ্টা করবে কারন এটার উপর একটা ট্রাভেল স্টোরি লিখতে হবে । যাওয়ার পথে আব্বু কিছু কিছু স্থান ও স্থাপনা চিনাতে চেষ্টা করছেন ।আমরাতো এখনও উত্তর-দক্ষিনই ঠিক রাখতে পারিনা ।তবে দিক ঠিক না রাখতে পারলেও কাঁকরাইল মোড়, রমনা পার্ক, হাইকোর্ট এলাকা, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিশু পার্ক এ জায়গাগুলি আর একবার দেখলে চিনতে অসুবিধা হবেনা ।শুক্রবার তাই রাস্তায় যানযট ছিলনা । ১৫-২০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম । গেটেই টিকেট কাউন্টার । বড়দের টিকেটের মূল্য মাথাপিছু ২০ টাকা আর  ৩ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য টিকেটের মূল্য ১০ টাকা । জাদুঘর এরিয়াতে ঢুকলাম ।জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য আব্বু দাঁড়াতে বললেন । আমরা জাদুঘর পেছনে রেখে দাঁড়ালাম ঠিকই, তবে কোন দিকে ফিরে দাঁড়ালাম তা ঠিক করতে পারলামনা ।ছবি তোলা শেষে আব্বু বললেন বাঁ দিকে ওটা হল বঙ্গবন্ধু সেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আর তার সামনেই রয়েছে বারডেম হাসপাতাল । ডানদিকে রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরী আর পাবলিক লাইব্রেরীর পিছনে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ।সামনে রয়েছে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যা রেসকোর্স ময়দান নামেও পরিচিত । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেখ মুজিবুর রহমান এখানেই ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষন দিয়েছিলেন ।

এবার জাদুঘরের ভিতরে প্রবেশের পালা । ঢুকতেই প্রথম দেখলাম বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র ।নিজ জেলার নাম বললে অপারেটর বোতাম টিপে, আর যেখানে লাইটটি জ্বলে ওঠে ওটাই সংশ্লিষ্ট জেলা ।দ্বিতীয় কক্ষে রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সুন্দরবন । তারপর একে একে দেখা আর সামনে চলতে থাকা । আমাদের শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষি ,শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, গাছ-পালা, ফুল-ফল, পশু-পাখি, গ্রাম বাংলার দৃশ্য এসব অনেক কিছুই রয়েছে জাদুঘরে । কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী, কৃষক, শ্রমিক ইত্যাদি পেশার মানুষের জীবনযাত্রা ও ‍তাঁদের উৎপাদিত জিনিষপত্র ইত্যাদি সবই রয়েছে জাদুঘরে ।কী নেই জাদুঘরে ? এক কথায় বলতে গেলে সবই আছে । শিল্পী জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবি নিয়ে রয়েছে জয়নুল গ্যালারী । রবীন্দ্র , নজরুল, বঙ্কিম, শরৎ, মীর মোশাররফ, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকদের নিয়েও রয়েছে একটি আলাদা গ্যালারী ।দেখতে দেখতে যেন শেষ হয়না । স্বল্প সময়ের মধ্যে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম ভবিষ্যতে আবার আসব, আরও ভালভাবে দেখব এ প্রত্যাশায় ।

জানা হলো বাংলা বর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখ , স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ শে মার্চ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে জাদুঘরে প্রবেশের সুযোগ পায় । জাদুঘর সাধারনত শনিবার-বুধ সকাল ১০.৩০ টা থেকে বিকাল ৫.৩০ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৮.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । আর বৃহস্পতিবার জাতীয় যাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ । 

সময় হাতে থাকলেও হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত তাই বের হতেই হলো । এতক্ষন সময় থাকা হলো, এত কিছু দেখা হলো কিন্তু জাদুঘরের মধ্যে কোন ছবি তোলা হলোনা, কারন যাদুঘরের মধ্যে ছবি তোলা সম্পূর্নরুপে নিষেধ । দু’ ঘন্টারও বেশি সময় থাকা হলো, সব কিছু দেখতে না পারলেও দেখা হলো যাদুঘর । ক্লান্ত পায়ে হেঁটে চললাম, একবার পেছনে তাকিয়ে মনে মনে বললাম-আবার আসব আবার দেখা হবে। আজকের মত বিদায় জাদুঘর, বাই ।


( বিঃ দ্রঃ আব্বুর কথামত এ ট্রাভেল স্টোরিটি লিখলাম । এর আগে এ ধরনের কিছু লিখা হয়নি । তাই আব্বুর সহযোগিতা নিয়েই লেখাটি সম্পন্ন করেছি।) 

আরও ইভেন্ট দেখতে ক্লিক করুন
               


সাবসক্রাইব করুন

Wednesday, October 4, 2017

বিসিএস ও অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্ততির জন্য সহায়ক কিছু গুরুত্বপূর্ন বই-


প্রয়োজনীয় বইগুলো সহজে সংগ্রহ করার সুবিধার্থে একটি ঠিকানা দেয়া হলো। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে  যোগাযোগ করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও যে কোন বই সংগ্রহ করতে পারেন । তবে  সকল প্রকার আর্থিক লেনদেন নিজ দায়িত্বে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্পাদন করবেন।

=== ঠিকানা ===
রাব্বি বুক হাউজ,    
প্রোঃ-মোঃ আহমদুল্লাহ,
ইসলামিয়া মার্কেট
২ নং গলি, নীল ক্ষেত
ঢাকা-১২০৫
মোবাইলঃ  01673-782525

বি সি এস প্রিলিমিনারি টেস্ট এর  সহায়ক কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নমুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ




ব্যাংক  ও অন্যান্য পরীক্ষার সহায়ক কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদন মুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ






প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ইংরেজি সহায়ক প্রয়োজনীয় কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নমুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ



প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাধারন জ্ঞান সহায়ক প্রয়োজনীয় কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নমুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ




IELTS এর সহায়ক প্রয়োজনীয় কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নমুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ











TOEFL এর সহায়ক প্রয়োজনীয় কয়েকটি বইয়ের প্রচ্ছদ নমুনা হিসেবে দেয়া হলোঃ





Featured post

অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী স্মরণে।

অধ্যক্ষ এম এ বারী ছবিটি স্যারের জৈষ্ঠ পুত্র জনাব সাজ্জাদুল বারী ’র নিকট থেকে সংগৃহীত।  আমার প্রথম বস অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী। আজ থেকে ঊনত্রিশ...