Sunday, December 3, 2017

প্রশ্নপত্র ফাঁস : পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পাওয়া যেন অধিকারে পরিণত না হয়।

ভাল হোক আর মন্দ হোক, কোন সিস্টেম যদি দীর্ঘ সময় ধারাবহিকভাবে চলতে থাকে সেটা এক সময় প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় । যেমন বিভিন্ন বিষয়ে জনমত তৈরি করতে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে বিষয়ে জনমত গঠিত হয় এবং এক ধরনের প্রতিষ্ঠিত নিয়মেও পরিণত হয় ।

বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে ।প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, উচ্চশিক্ষায় অনুষ্ঠিত এমন কোন পাবলিক পরীক্ষা নেই যার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে ফাঁস হয়না । শুধু পাবলিক পরীক্ষা নয় বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিক্যাল সহ যেসকল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলির প্রায় সব পরীক্ষার প্রশ্নপত্রই ফাঁস হয়ে যায় পরীক্ষার পূর্বেই । বিসিএস সহ কোন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক চাকুরির পরীক্ষা বাদ নেই যেটার প্রশ্নপত্র পরীক্ষার পূর্বে ফাঁস হচ্ছেনা । এগুলির পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়াটা এখন মামুলি ব্যাপারে পরিনত হয়েছে ।

ভেবেছিলাম এ বছর হয়তো প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগে ফাঁস হবেনা । কিন্ত না এবারও প্রশ্নপত্রকে রেহাই দেয়া হয়নি । তবে পরীক্ষার পুর্বেই প্রশ্নপত্র ফাঁস সংস্কৃতি শুরু হওয়ার প্রথম দিকের চরিত্রের সঙ্গে এখনকার চরিত্রের কিছুটা ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে ।প্রথম অবস্থায় মানুষের মধ্যে এ বিষয়টিকে নিয়ে যতটা সমালোচনা পরিলক্ষিত হয়েছিল বা বিষয়টাকে যতটা ঘৃনা করেছিল এখন আর ততটা সমালোচনা বা ঘৃনা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা ।ধীরে ধীরে মানুষ যেন এটাকে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার বলে ইচ্ছা না থাকলেও মেনে নিচ্ছে । যে প্রযুক্তির বদৌলতে এসব খবর জেনে যেসব মানুষ ঘৃনাভরে সমালোচনা করেছিলেন, সে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের অনেকেই এখন নিজ সন্তানের জন্য পরীক্ষা পূর্ব প্রশ্নপত্র খুঁজছেন । সত্যি বললে বলতে হয়- প্রযুক্তি আমাদের কাজ কর্মকে যতটা গতিশীল করেছে, নৈতিকতাকে তার চেয়েও বেশি বিপন্ন করেছে । তবে এটা প্রযুক্তির দোষ নয়, দোষ হলো মানুষের কুপ্রবৃত্তির ।

মানুষকে বলা হয় পরিবেশের দাস । যেকোন পরিবেশ মানুষকে সেরকম করে ফেলে । বর্তমানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বচনটি একেবারেই প্রমাণিত । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরাও নকল করার প্র্যাকটিস করছে, পরীক্ষা পূর্ব প্রশ্নপত্র পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে । মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকের কিশোরদের মাঝে এ প্রবণতা আরও প্রকট । উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে এটা যে ভয়াবহতা লাভ করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা । শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যদের উদাহরন দিয়ে নিজেদের নকল করা বা পরীক্ষা পূর্ব প্রশ্ন পাওয়াকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে । অনেক শিক্ষককেও এখন পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব কাজে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে । আগে যাদেরকে চরম সমালোচনা করতে দেখা যেত এখন তারা এ্যাঁ ওঁ বা মিন মিন করে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন । অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এক হয়ে পরীক্ষার পূর্বে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের পিছনে দৌড়ছেন ।

সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো এ অনৈতিক কাজের জন্য কেউ দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেনা । কেউ শাস্তি পাচ্ছেনা । ফাঁস হওয়াকে অনেক ক্ষেত্রে ফাঁসও বলা যাচ্ছেনা । বিষয়টি যেভাবে স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি লাভ করছে তাতে ভয় হচ্ছে যে, এটি অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায় কিনা । এরশাদ সাহেবের আমলে ভোটের অবস্থা কেমন ছিল তাতো সবার জানাই আছে । তৎকালে ছাত্ররা নকলের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কোথাও কোথাও এমন স্লোগান দিতেও শোনা যেত-‘ ভোট হয়েছে যেভাবে, পরীক্ষাও হবে সেভাবে’। 

এখন আমাদের যেভাবে পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে, সেটা যদি ধারাবাহিকভাবে আরও চলতে থাকে তাহলে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে অধিকারেও রুপ নিতে পারে । শিক্ষা ব্যবস্থাই যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে আর থাকলো কী ? ধ্বংসই যদি উদ্দেশ্য না হয় তবে বলব প্লিজ আর না, যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে, এবার বন্ধ করুন । তা নাহলে ভবিষ্যতে জাতিকে এমন স্লোগানও শুনতে হতে পারে- ‘পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দে, নইলে গদি ছেড়ে দে ।’

==== এ এস এম কামাল উদ্দিন, সহকারী অধ্যাপক ====

Featured post

অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী স্মরণে।

অধ্যক্ষ এম এ বারী ছবিটি স্যারের জৈষ্ঠ পুত্র জনাব সাজ্জাদুল বারী ’র নিকট থেকে সংগৃহীত।  আমার প্রথম বস অধ্যক্ষ জনাব এম এ বারী। আজ থেকে ঊনত্রিশ...