Wednesday, September 20, 2017

রাজ হাঁস মানে হাঁসের রাজা, তাহলে রাজনীতি মানে ?

আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই রাজনীতি সচেতন ।অবশ্য এর কিছু কারনও আছে । বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে যে অনুপ্রেরণাগুলো কাজ করেছে সেগুলির মধ্যে মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা ছিল অন্যতম ।পৃথিবীতে মনে হয় আর এমন একটি দেশও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যারা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সংগ্রামকে ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে রুপদান করেছে । ৪৭ এ দেশ ভাগের মাত্র ৪/৫ বছরের মাথায় পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের উপর উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ আর মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় রক্তদানের মধ্য দিয়েই আমাদের সংগ্রামী জীবনের আনুষ্ঠানিক বিস্ফোরন ঘটে ।দু’শ বছরের ইংরেজ শাসনের গোলামীর শৃংখল মুক্ত হয়েও আবার ২৫ বছরের জন্য নিজেদের কাছেই নিজেরা শৃংখল বন্দী রয়ে যাই ।এ শৃংখল মুক্ত হতে আমাদেরকে চিন্তা-মননে, ধ্যানে-জ্ঞানে, কাজে-কর্মে, শিক্ষা-দীক্ষায় সর্বদাই এক সংগ্রামী জীবন যাপন করতে হয়েছে ১৯৭১ পর্যন্ত ।

তারপরও কী আমরা চুড়ান্ত মুক্তি পেয়েছি? পেরেছি কি মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে? পেয়েছি কি মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ? প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি কি সামাজিক ন্যায় বিচার ? অর্জিত হয়েছে কি আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি ? পেয়েছি কি সত্যিকারের গণতন্ত্র ? তৈরি করতে পেরেছি কি একটি দূর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ? এমন ডজন ডজন প্রশ্ন যেমন আছে, শত শত উত্তরও তেমন আছে । প্রশ্ন সঠিক নাকি উত্তর সঠিক এটা নিয়ে আছে হাজারো মতান্তর আর টানাটানি ।নিজমত প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতার রশি টানাটানিতে রশি ছিড়ে যাওয়ার পরও টানি। যতবার ছিড়ে গিট্টু বেঁধে ততবার টানি গেন্ডারি চিবানোর মেশিনের শেষবারের ছোগলা চিবানোর মত ।সর্বশক্তি দিয়ে টানি তবুও কী পরমতকে মানি ?  

৭১ এর পর থেকে এখনও পর্যন্ত নানান আধিকার আদায়ের সংগ্রাম আমাদের করতে হয়েছে । ভবিষ্যতেও হয়তো অনেক সংগ্রাম আমাদের করতে হবে অধিকার আদায়ের জন্য । তাই সংগ্রাম করতে করতে রাজনীতি শব্দটি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে রক্তে মিশে গেছে । রাজনীতি শব্দটি আমাদের কাছে ডাল ভাতের মত এতটাই সহজ একটি শব্দ হয়ে গেছে যা করতে আমাদের তেমন কোন কষ্ট করার প্রয়োজন হয়না ।সত্যি বলতে কি এর মত এত সহজ পেশা, পুঁজিবিহীন ব্যবসা  আপাতত আর তেমন কিছুই নেই ।তাই যারা রাজনীতি বুঝি তারাও করি, আর যারা বুঝিনা তারাও করি ।

কে রাজনীতি করেননা ? পেশাদার রাজনীতিবিদ যেমন রাজনীতি করেন, অপেশাদারও রাজনীতি করেন । যিনি রাজনীতি বুঝেন তিনিও রাজনীতি করেন, যিনি বুঝেননা তিনিও করেন । কেউ কিছুই করেননা বলে রাজনীতি করেন, কেউ অনেক কিছুকে রক্ষা করতে রাজনীতি করেন ।কেউ অর্থ ব্যয় করতে রাজনীতি করেন, কেউ অর্থ আয় করতে রাজনীতি করেন ।কেউ শত্রুতা উদ্ধার করতে রাজনীতি করেন, কেউ বন্ধুর পাল্লায় পড়ে রাজনীতি করেন । কেউ অন্যকে দেখে রাজনীতি করেন, কেউ অন্যকে দেখাতে রাজনীতি করেন ।কেউ সম্মান পেতে রাজনীতি করেন, কেউ অন্যকে অসম্মানিত করতে রাজনীতি করেন ।কেউ ভীত হয়ে রাজনীতি করেন, কেউ অন্যকে ভীত করতে রাজনীতি করেন । কেউ সম্পদ বানাতে রাজনীতি করেন, কেউ বানানো সম্পদ রক্ষা করতে রাজনীতি করেন।কেউ তেল মাখতে রাজনীতি করেন, কেউ তেল মাখাতে রাজনীতি করেন । কেউ ও পার্টি করেন বলে কেউ এ পার্টি করেন।

এভাবে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে, কারনে-অকারনে, বুঝে-নাবুঝে বা অন্য আরও অনেক কারনে কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত আমাদের দেশের সকল শ্রেণি-পেশার প্রায় সব মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতি করে ।কৃষক, শ্রমিক, তাঁতী, জেলে, কামার, কুমার, চালক, মালিক, ছাত্র, শিক্ষক, প্রভাষক, অধ্যাপক, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক, সুপার, ভিসি, প্রোভিসি, আইনজীবি, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এনজিও কর্মী, ব্যাংকার, সরকারি-বেসরকারী চাকুরিজীবি সহ আরও অনেক শ্রেণি পেশার মানুষ আছে তাদের মধ্যে রাজনীতি করেননা এমন কে আছেন ? সকলেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতি করেন। পার্থক্য হলো-কেউ প্রকাশ্যে করেন, কেউ আইনি বাধার কারনে অপ্রকাশ্যে করেন ।একজন তার পছন্দের দলীয় আদর্শের প্রতি অনুরাগী হয়ে মুক্ত মত প্রকাশ করে অন্যদের তৃপ্তি দেন, একই আদর্শের আরেকজন মুখে চুইংঘাম চিবাতে চিবাতে কথা বলে নিজেই তৃপ্তি নেন ।

আমাদের দেশে রাজনীতির নামে আমরা এখন যা করছি তা আসলেই কী রাজনীতি? রাজ হাঁস মানে যদি হাঁসের রাজা হয়, তাহলে রাজনীতি মানেতো নীতির রাজা। আমাদের রাজনীতির চরিত্র দেখে মনে হয় আমরা আসলে রাজনীতি ছাড়া আর সবই করছি ।